চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুই বছরের ব্যবধানে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৪ গুণ

ইমাম হোসাইন রাজু

২৩ জুন, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

এডিস মশার প্রজনন মৌসুমের শুরুতেই চট্টগ্রামে দাপট বেড়েছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর। গত কয়েক বছর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকা মশার দ্বারা সংক্রমিত রোগটি এখন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। শুধুমাত্র চলতি বছরের ছয় মাসেই রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭০ জন। অথচ বছর দু’য়েক আগে (২০২০) একই সময়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১১ জন। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে আক্রান্তের হার বেড়েছে প্রায় ৩৪ গুণ।

 

আরও ভয়ঙ্কর খবর হচ্ছে গত তিন বছরে একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও গত ছয়মাসে প্রাণ হারিয়েছেন ৮ জন। যাদের মধ্যে চলতি মাসেই মারা যান পাঁচজন। আক্রান্ত আর মৃত্যুর এমন চিত্রে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।

 

ডেঙ্গুর এমন রূপ উদ্বেগজনক মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার শুরুতেই যদি এমন পরিস্থিতি থাকে, তাহলে সামনের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠবে। তাই এখনই সঠিক সময়ে মশা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামে মাত্র ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। পরবর্তী বছরে তথা ২০২১ সালে প্রথম এ ছয়মাসে কোন রোগীই শনাক্ত হয়নি। আর ২০২২ সালের প্রথম ছয়মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৩৬ জন। অথচ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭০ জন। সে হিসেবে গত দুই বছরের ব্যবধানে ৩৪ গুণ বেশি রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রথম ছয়মাসে ডেঙ্গুতে কোন রোগীর মৃত্যুর খবর না থাকলেও ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৩ জন এবং চলতি মাসে ৫ জনসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, বেশিরভাগ রোগীই শেষ সময়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যার কারণে তাদের শারীরিক জটিলতাও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুতই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

 

যেসব উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে: হাড়ের জয়েন্টে ব্যাথা কিংবা গা-হাত পায়ে ব্যাথা, প্রচণ্ড জ্বর, গায়ে র‌্যাশ, বমি আর মাথা ব্যাথা, এই সবকটি উপসর্গ থাকলে বুঝতে হবে আপনার ডেঙ্গু হলেও হতে পারে। এছাড়াও ডেঙ্গুর আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে যারমধ্যে মুখ আর নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ কিংবা প্রশ্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হওয়া, চামড়ায় কালো কালো ছোপ দেখা দেওয়া এবং পেটে অসম্ভব ব্যাথা হওয়াটাও ডেঙ্গুর লক্ষণ।

 

একদিনে রেকর্ড রোগী ভর্তি হাসপাতালে: গেল একদিনে চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা চলতি বছরে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রেকর্ড সংখ্যক রোগী। ভর্তিরতদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে ১৭ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১২ জন রোগী ভর্তি হয়। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭০ জন। যাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

আরও এক নারীর মৃত্যু: চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শাহনাজ বেগম নামে (৩৭) বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ নারী। তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৯ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হওয়া শাহনাজ বেগম আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট