চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

ঠিকানা যাচাইয়ে ৩২ বার তদন্ত, হাইকোর্টের উষ্মা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুন, ২০২৩ | ১:১৯ অপরাহ্ণ

দুই জেলার বাসিন্দা দেখিয়ে এক কর্মকর্তার চাকরি নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে ৩২ বার তদন্ত শেষে আবারও তদন্তের জন্য কমিটি গঠন ও কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। গতকাল সোমবার রিট শুনানিতে ৩৩ তম তদন্তের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

 

এসময় আদালত ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্ত করার পর আবারও কমিটি গঠনকে হয়রানি বলে মন্তব্য করে উষ্মা প্রকাশ করেন। ঠিকানা নিয়ে তদন্ত করার অধিকার আছে উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেছেন, তাই বলে ৩২ বার! আর কতবার তদন্ত করবেন? যা ইচ্ছা তাই করবেন। এটা তো হয়রানি। গতকাল সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চে এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি হয়।

 

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।

 

জানা যায়, পৃথক দুই জেলার দুটি ইউনিয়নে জন্মস্থান দেখিয়ে ভিন্ন জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয়তা সনদ গ্রহণ এবং পৃথক জেলায় গোপনে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

 

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘সুজন বড়ুয়ার ঠিকানা একটাই। তিনি বর্তমানে বান্দরবানের বাসিন্দা। দুই ঠিকানা ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে ৩২ বার তদন্ত হয়েছে। পুলিশ, পিবিআই ও দুদক পৃথক তদন্ত করেছে। প্রতিটি তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারপরও তদন্ত কমিটি গঠন করায় রিটটি করা হয়। মীমাংসিত বিষয়ে আবার নতুন করে তদন্ত ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। হাইকোর্ট ৩৩তম তদন্তের কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।’

 

রিট আবেদনকারীর আইনজীবীর তথ্যমতে, সুজন বড়ুয়া ২০০৪ সালের ৪ জুলাই স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। তখন তাঁর স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার উল্লেখ করা হয়। তবে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি হলফনামার মাধ্যমে তাঁর স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে জমি কিনে বান্দরবানের বাসিন্দা হন। এরপর ২০১২ সালের ২২ অক্টোবর তিনি স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। সার্ভিস বইয়ে (পার্ট-২) দেখা যায়, বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সুজন বড়ুয়া ২০১২ সালের ১৯ নভেম্বর ওই পদে যোগদান করেন। ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৬ সালের ২৭ জুন তাঁর চাকরি স্থায়ীকরণ হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তিনি জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি গ্রহণের সময় তাঁর বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলায় নেওয়া চাকরি ও ঠিকানা গোপনের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ৩২ বার তদন্ত হয়েছে।

 

রিটকারী জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া পূর্বকোণকে বলেন, ‘চাকরি গ্রহণের পর থেকেই একটি পক্ষ ইর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্য বিভাগসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত করেও যখন আনিত অভিযোগের প্রমাণ পায়নি, এরপরও আমাকে হয়রানি করতে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর কর্তৃপক্ষও তা আমলে নিয়ে তদন্ত করছেন। যার কারণে আমি আদালতের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করেছেন।’

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট