চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

পোস্টার নিয়ন্ত্রণে আইন আছে প্রয়োগ নেই

ইফতেখারুল ইসলাম

১৭ জুন, ২০২৩ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

পোস্টার নিয়ন্ত্রণে আইন আছে। এর বাইরেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এলাকায় যেখানে সেখানে পোস্টার না লাগানোর জন্য নগরীর ১১৫টি স্থান নির্দিষ্ট করেছে সংস্থাটি। নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে নির্ধারিত স্থানে পোস্টার লাগানোর সিদ্ধান্ত হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। যার ফল হিসেবে যত্রতত্র লাগানো হচ্ছে পোস্টার। দৃশ্য দূষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না নগরবাসী।

 

এক সময় পোস্টার মানে ছিল শিল্পচর্চার একটি বড় ক্ষেত্র। প্রতিবাদ কিংবা কাউকে আকৃষ্ট করার বড় হাতিয়ার ছিল পোস্টার। আর এখন চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম দৃশ্য দূষণের নাম হল পোস্টার।

 

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর, বাড়ির দেয়াল, উড়াল সড়কের পিলার, পরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরসহ এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে পোস্টার সাঁটানো হয় না। গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং থানা ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে এসব পোস্টার-ব্যানারের আধিক্য বেশি। স্থানীয় থানার ওসি থেকে শুরু করে দারোগা-কনস্টেবলসহ থানার প্রতিটি মানুষ ওই ব্যানারের ছবির মানুষকে একটু মূল্যায়ন করে। আর এই মূল্যায়নের কারণে এলাকার ছোটখাটো ঝগড়াঝাটি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী ঘটনার সুরাহার জন্য ওই সকল পাতি নেতাদের বেশ কদর।  মূলত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, কোচিং সেন্টার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচারণার জন্য এসব পোস্টার সাঁটানো হয়। তবে নগরীর পোস্টারের ৯০ শতাংশই দেয় কোচিং সেন্টারগুলো। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের গেইটে পর্যন্ত পোস্টার লাগাতে দ্বিধা করে না।

 

সচেতন মহলের অভিমত, যারা পোস্টার লাগায় তাদের হাতে-নাতে ধরে শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির পোস্টার লাগানো হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পোস্টার আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই কেউ যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর সাহস করবে না।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, নির্ধারিত ১১৫টি জায়গা ভাড়া দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিছু প্রতিষ্ঠান তাতে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। তাই কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। ফের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণে পোস্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেট আনার চেষ্টা চলছে। ম্যাজিস্ট্রেট এলেই অবৈধ পোস্টার বিরোধী অভিযান চালিয়ে পোস্টার অপসারণের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানা করা হবে। নগরীর প্রায় সব জায়গায় পোস্টার লাগানো হচ্ছে একথা স্বীকার করে মেয়র বলেন, এতে নগরীর সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয়, তেমনি এগুলো পরিষ্কার করতে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের বাড়তি সময় দিতে হয়। তাই পোস্টার নিয়ন্ত্রণে আনা অতীব জরুরি। তাই গত বছরের জুলাই থেকে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করা হয়েছে।

 

পোস্টার আইন: আইন অনুযায়ী বিনা অনুমতিতে নগরীতে পোস্টার লাগানোর সুযোগ নেই। সিটি কর্পোরেন সংক্রান্ত বাংলাদেশ গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, বড় পোস্টারের জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা এবং ছোট পোস্টারের জন্য প্রতিদিন ৭ টাকা করে কর দিতে হবে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণকল্পে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাস করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিধান লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো সুবিধাভোগীর অনুকূলে বিধান লঙ্ঘন করে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো হলে ওই সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে সর্বনিম্ন ১০ হাজার ও সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডারোপ করা যাবে এবং অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া যাবে। বিচারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিচার হবে। সুবিধাভোগীর ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া গেলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার হবে। কোনো কোম্পানি যদি এ আইন লঙ্ঘন করে তবে ওই কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ অপরাধ সংঘটন করেছেন বলে ধরা হবে। বিদ্যমান আইনের বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশন পরিচালিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কোনো স্থানীয় নির্বাচনে, নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান এবং এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট