চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে

মিহরাজ রায়হান

১৫ জুন, ২০২৩ | ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সবুজের সমারোহে নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে এসেছে আষাঢ়। আকাশ ছেয়েছে মেঘের ঘনঘটায়। মেঘদূতের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে পহেলা আষাঢ়। গাছের পাতা, টিনের চাল কিংবা ছাদের রেলিং ছুঁয়ে এবং খোলা আকাশের প্রান্তরজুড়ে এলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার দিন।

 

আষাঢ় নিয়ে কবিগুরু তার ‌কবিতায় লিখেছেন- আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে/ আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে/ এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি….। আর কবি নজরুল নিজের মনের চঞ্চলতা প্রকাশ করেন এভাবে- রিম্ ঝিম্ রিম্ ঝিম্ ঝরে শাওন ধারা/ গৃহকোণে একা আমি ঘুমহারা/ ঘুমন্ত ধরা মাঝে/ জল-নূপুর বাজে,/ বিবাগী মন মোর হলো পথহারা…।

 

গ্রীষ্মকে বিদায় জানিয়ে সত্যিই বাদল দিন এসেছে এবং কদম ফুল ফুটেছে। আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। গ্রীষ্মের দাবদাহে হাঁসফাঁস মানুষ কবির মতোই মনে করেন মেঘেঢাকা বৃষ্টির আষাঢ় এসেছে গ্রীষ্মের দীর্ঘ তাপদহনের জ্বালা-যন্ত্রণার যবনিকা টানতে। মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রখর দাবদাহে কাহিল মানুষ, নদ-নদী, প্রকৃতি ও উদ্ভিদরাজি। ঋতুবৈচিত্রের পালাবদলে আজ শুরু হলো বর্ষাকাল।

 

আষাঢ় এসেই বর্ষার মাধ্যমে প্রকৃতিকে বদলে দেয়; চারদিকের পরিবেশে ভিন্নমাত্রা যোগ করে। বর্ষা রিমঝিম বৃষ্টি ঝরিয়ে প্রকৃতিকে করে তোলে সজীব। বর্ষার মুষলধারার বৃষ্টিতে ভেজার জন্য তাই তৃষিত অপেক্ষাতুর প্রকৃতি উন্মুখ হয়ে ছিল। তাপদাহে চৌচির মাঠ-ঘাট খাল-বিল বনবিথিকায় জেগে ওঠবে নবীন প্রাণের ছন্দ এই বর্ষায়। নদী-নালায় থৈ থৈ পানিতে আবহমান বাংলার রূপ হবে অপরূপ রূপবতী সলিল দুহিতা। বর্ষার সৌন্দর্যে বিমোহিত রুপসি বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ আষাঢ়কে বলেছেন, ‘ধ্যানমগ্ন বাউল-সুখের বাঁশি।’ কবি বলেন, ‘বর্ষা প্রথমত আসে বাইরের আকাশে। অন্তরের আকাশে তাকে গান গেয়ে ডেকে আনতে হয়।’

 

বর্ষার ভারি বর্ষণে শরীর ধুয়ে নেয় প্রকৃতি। পরিচ্ছন্ন হয়। নতুন করে জেগে ওঠে। বেলী, বকুল, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। আর মিষ্টি হাসি হয়ে ফোটে ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।’ ময়ূর পেখম মেলে নাচে। বর্ষার চিত্তচাঞ্চল্য প্রকাশ করে কবিগুরু লিখেছেন- ‘হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে…।’ ময়ূরের মতোই বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজে কাটে বাঙালীর শৈশব। স্কুলে যাওয়ার সময় কিংবা ফেরার পথে দুরন্ত কিশোরী আনন্দে গায়ে মাখে বৃষ্টির ফোঁটা। আর যত্ন করে ব্যাগে পুরে রাখে রঙিন ছাতাটি। তুমুল বৃষ্টিতে গাঁয়ের ছেলেরা নেমে পড়ে ফুটবল নিয়ে। বর্ষার এইত রূপ।

 

আবার বৃষ্টির জন্য কবি অপেক্ষায় থেকেছেন যেমন মানবহৃদয় অপেক্ষায় থাকে প্রেমিকার জন্য। কবি শামসুর রাহমান বর্ষাকে দেখতে চেয়েছেন সবকিছু ছেড়ে ভালোলাগার স্পর্শ করে। তাই তো চাষির মতোই তিনিও বর্ষাকে প্রার্থনা করেছেন- টেবিলে রয়েছি ঝুঁকে, আমিও চাষীর মতো/ বড় ব্যগ্র হয়ে চেয়ে আছি খাতার পাতায়/ যদি জড়ো হয় মেঘ, যদি ঝরে ফুল, বৃষ্টি….।

 

বর্ষা ঘিরে আবারও হবে নাগরিক উৎসব। প্রিয় ঋতুকে আগের মতোই নাচ গান কবিতাসহ নানা আয়োজনে বরণ করে নেয়া হবে। ঋতুর প্রথম দিন আজ পহেলা আষাঢ় বর্ষাকে বরণ করে নেয়া হবে। ছায়ানট, উদীচীর মতো কিছু সংগঠন এ চর্চা অব্যাহত রেখেছে। চারুকলার বকুলতলা, লিচুতলা, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থানে চলবে বর্ষা বন্দনা। কেউ বর্ষার প্রথমদিন গান গেয়ে নাচ করে ঋতুকে বরণ করে নেবেন। আবার কেউ অপেক্ষা করেন শ্রাবণ পর্যন্ত।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট