ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনো বকেয়া পড়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। ৭-৮ বছর আগের বড় অঙ্কের পুঁজি আটকে থাকায় অনেকেই ফতুর হয়ে গেছেন। তারপরও টেনেটুনে টিকে রয়েছেন অন্তত ২০ জন। ধার-কর্জ ও ঋণ নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। এবারও একইভাবে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়তদাররা।
রীফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোখলেছুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা এক লাখের বেশি চামড়া কিনি। উৎপাদনের উপর নির্ভর করে চামড়া কিনতে হয়। এবারও লক্ষাধিক পরিমাণ চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ঢাকা থেকেও ট্যানারি মালিকেরা চামড়া সংগ্রহ করতে আসবেন। আশা করছি, এবার চামড়া নষ্ট হবে না।’ তিনি বলেন, ‘গত ২-৩ বছর বিশ্ববাজারে চামড়ার তৈরি পণ্যের ব্যবসা খারাপ ছিল। মানুষ এখন চামড়াজাতীয় পণ্যের প্রতি ঝুঁকছেন। চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে। চামড়া সংগ্রহ ও ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি।’ বৈশি^ক বাজারে চামড়ার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ কয়েকটি দেশ চামড়াজাতীয় পণ্যের দিকে ফের ঝুঁকে পড়েছে। কয়েক বছর আগে বড় কোম্পানিগুলো সিনথেটিক (কৃত্রিম) মেটেরিয়ালের ব্যবহার বাড়িয়েছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ২০১৪-১৫ সালের প্রায় ২০ কোটি টাকা বকেয়া আটকে রয়েছে। ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা কিছু কিছু টাকা পরিশোধ করলেও বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। এতে পুঁজি হারিয়ে অনেক আড়তদার-ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছেন।’
আড়তদাররা জানান, গরু, ছাগল ও মহিষের মিলে কয়েক বছর ধরে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদাররা। এবারও সেই পরিমাণ চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলা ও এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও বিপুল পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করে লবণজাত করেন। কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আড়ততার। গুদাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার, লোকবল নিয়োগ ও লবণ সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে লবণের দাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
আড়তদার সমিতির নেতারা জানান, সমিতির অধীনে ১১২ জন আড়তদার ছিলেন। এর বাইরে অনেকেই চামড়ার ব্যবসা করেছেন। এছাড়াও কোরবানির ঈদে মৌসুমী অনেক ব্যবসায়ী চামড়া ব্যবসা করেন। মৌসুমী ব্যবসায়ী, আড়তদার থেকে শুরু করে ট্যানারি মালিক-একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ট্যানারি মালিকের কাছে বড় অঙ্কের পুঁজি আটকে থাকায় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা পুঁজিহারা হয়ে পড়েছেন। ১১২ জন আড়তদারের মধ্যে এখন টিকে রয়েছেন ২০-৩০ জন। সরকারের কাছে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের দাবি ছিল আড়তদারদের। এখনো তা উপেক্ষিত রয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় ব্যবসায় টিকে থাকতে পারেনি অনেক আড়তদার ও ব্যবসায়ী। এমনকি ঢাকার অনেক মাঝারি ও ছোট আকারের ট্যানারি দেউলিয়া হয়ে গেছে। এ ধরনের মালিকদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। বকেয়া পাওনা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন আড়তদাররা। এতে পুঁজি হারিয়ে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘আগের মতো ব্যবসা নেই। আয় ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকায় আড়তদাররা পুঁজি ভেঙে খাচ্ছেন। কোরবানির ঈদের জন্য আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে ধার-দেনা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত মৌসুমেও আড়তদাররা ভালো দাম দিয়ে চামড়া কিনেছেন। কোরবানিদাতা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, পুরোনো বকেয়া আটকে থাকলেও কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ব্যবসা চলছে। কোরবানির আগে নিয়মিত বকেয়া টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছেন ট্যানারি মালিকেরা। ৭-৮ বছর আগের বকেয়া টাকা ব্লক হয়ে রয়েছে।
২০১৯ ও ২০২০ সালে চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় বড় ধস নেমেছিল। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে না পারায় হাজার হাজার চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছিলেন। বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানায় সংগ্রহ করা চামড়াও বিক্রি করতে না পারায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছিল।
চামড়া ব্যবসায়ী জানান, করোনা মহামারীর সময় বড় ধাক্কা খায় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। পুঁজি সংকট ও করোনা সংক্রমণের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে এ সময়ে প্রত্যাশিত চামড়া কিনতে পারেননি আড়তদাররা। এতে নষ্ট হয় হাজার হাজার চামড়া। পথে-ঘাটে চামড়া ফেলে দেয় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। সেই ধাক্কা খেয়ে বড় ধরনের ধস নামে চামড়া ব্যবসায়। তবে গত মৌসুমে চামড়া সংগ্রহ ভালো হয়েছে।
পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ