দীর্ঘ ২০ মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের এনজিওগ্রাম মেশিনটি এখনো সচল হয়নি। মেশিনটি সচল করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোপূর্বে একাধিকবার উদ্যোগও নিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি’ নীতিমালার চেয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ৬ গুণ বেশি দাবি করায় মেশিনটি সচল করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ওষুধাগার বা সিএমএসডি থেকে চমেক হাসপাতালের জন্য ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ ইউএস ডলারের বা ৪ কোটি ৬৯ লাখ ২৫ হাজার ১৯০ টাকার মেশিনটি সরবরাহ করে। যা ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট চমেক হাসাপাতালের হৃদরোগ বিভাগে চালু করা হয়। পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি প্রদান করা মেশিনটির মেয়াদকাল ছিল ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট। কিন্তু মেশিনটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় তথা ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর অকেজো হয়ে পড়ে।
চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মেশিনটি মেরামতের জন্য ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিগ্রাফিক লিমিটেডকে লিখিতভাবে জানানো হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশলীরা এসে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ত্রুটি রয়েছে যা মেরামতে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ টাকার একটি প্রাক্কলন ব্যয় দাখিল করেন। যদিও ২০২১ সালের ৪ এপ্রিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সমূহ নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখার স্বার্থে ‘রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি’ বা সিএমসি করার জন্য বলা হলেও প্রতিউত্তরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিগ্রাফি ট্রেডিং লিমিটেড ‘নতুন কোন চুক্তির প্রয়োজন নেই’ বলে সরাসরি মতামত প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী ক্রয়মূল্যের সাড়ে ৬ শতাংশ হিসেবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেশিনটি সচল করতে পাওনা হবে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ১৩৭ টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার ৭৫০ টাকা দাবি করে। যা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার চেয়ে ৬ গুণের বেশি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও এ নিয়ে কোন সুরহা এখন পর্যন্ত হয়নি। যার কারণে সচল হচ্ছে না মেশিনটি। এতে করে সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘ত্রুটি থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগ বিভাগের একটি ক্যাথল্যাব বন্ধ রয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা এসে দেখেছেন, কিন্তু খরচের যে হিসাব দেয়া হয়েছিল, তা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার চেয়েও অনেক বেশি। যা নিয়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার চিঠি চালাচালিও করা হয়েছে। তবে অকেজো মেশিনটি সচলের পাশাপাশি নতুন আরও একটি মেশিন স্থাপনের জন্য যোগাযোগ চলছে। আশা করছি সেটিও পাওয়া যাবে।’
পূর্বকোণ/পিআর