চট্টগ্রাম সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাজেট নিয়ে যা বললেন তাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২ জুন, ২০২৩ | ৬:০০ অপরাহ্ণ

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব
আয়ের লক্ষ্যমাত্রা
বাস্তবসম্মত নয়
মির্জা আজিজুল ইসলাম
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অর্থ উপদেষ্টা

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় উল্লেখ করে বলেছেন এ লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। জিডিপির অনুপাতে কর আহরণ বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। পার্শ্ববর্তী নেপালের চেয়েও কর কম আদায় হয় বাংলাদেশে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর আমরা বাজেট বরাদ্দ করি। কিন্তু পুরো অর্থ ব্যবহার করতে পারি না। ফলে, বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়নে যে সুফল পাওয়া যেত তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। আসন্ন নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুরুতে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। পরে সরকার তা কমিয়ে ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা করেছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮-০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৮৬ শতাংশ।
২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ কার্যবছরের বাজেট প্রণয়নকারী মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থতার মূল কারণ হলো সরকারি কর্মকর্তাদের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিতার অভাব। জবাবদিহির ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সাফল্যের জন্য পুরস্কার এবং ব্যর্থতার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

 

জীবন যাত্রার ব্যয় হ্রাস ও
স্বয়ংক্রিয় স্থিতিশীলতায়
ভূমিকা রাখবে
প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন
চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

আসন্ন অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) প্রস্তাবিত বাজেট এমন এক সময়ে ঘোষিত হল যখন কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত। সেই আঘাত পুনরুদ্ধার হতে না হতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ভয়ানক অস্থির হয়েছে বিশ্ব বাজার। এর প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভে অব্যাহত চাপ, টাকার বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা, আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ইত্যাদি সূচকগুলো ক্রমশ সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। তারপরও জীবন যাত্রার ব্যয়ে স্বস্তি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা সম্বলিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। যার আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এতে মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২০২৪) বাজেট পেশের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. সেলিম উদ্দিন এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সম্ভাব্য মোট আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯শ কোটি টাকা। যার মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্য ৪ লাখ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত ২০ হাজার কোটি টাকা, কর বহির্ভূত আয় ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং অনুদান ৩ হাজার ৯শ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত আয়-ব্যয়ের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকার মধ্যে আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস হতে যথাক্রমে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ও ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে।
মোট বাজেটের ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা (৬২.৩৯%) পরিচালনা ব্যয়, ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা (৩৬.৪৩%) উন্নয়ন খাতে এবং অবশিষ্ট ৮ হাজার ৯২২ কোটি টাকা (১.১৭%) খাদ্য, ঋণ ও অগ্রিমে খরচ হবে।
ইতিহাসের সর্বোচ্চ আকারের এই বাজেট দুই সরকার বাস্তবায়ন করবে বিধায় বাজেটের প্রতিটি বিষয়, বরাদ্দকৃত খাত, বাস্তবায়ন কৌশল, সরকারের দর্শন, স্বপ্ন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলে নেয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোতে আলাদা আলাদা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ড. মো. সেলিম উদ্দিন আরো বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করলে অনেকগুলো ভাল ও গুণগত বৈশিষ্ট্য দেখা যাবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে মুদ্রাস্ফীতি রোধ, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধারা অব্যাহত রাখা, মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সমন্বয় সাধন, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ঘাটতি হ্রাস, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, কর ব্যবস্থার যৌক্তিকরণসহ নানাবিধ প্রস্তাবনা রয়েছে।
কর ব্যবস্থায় দেখা যায়- প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন- আয়কর মুক্ত সীমা ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা, নারীসহ সিনিয়র সিটিজেনদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে আয়কর সীমা ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। নূন্যতম কর অপরিবর্তিত থাকলেও করযোগ্য সীমার নীচে যারা আয় বিবরণী দাখিলে যোগ্য প্রত্যেকের উপর নূন্যতম ২ হাজার টাকা কর ধার্য্য করা হয়েছে। সম্পদের সারচার্জ ক্ষেত্রে মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি থেকে ৪ কোটি বৃদ্ধি হয়েছে এবং ৪ কোটি টাকার উপরের সম্পদের মালিককে ১০% সারচার্জ এবং ১০০ কোটি টাকার উপরে ৩৫% সারচার্জ ধার্য্য হবে। এইসব করহার পরিবর্তনে নিম্নআয়ের জনগণকে স্বস্তি, নূন্যতম ২ হাজার টাকা কর প্রদান করে কর সংস্কৃতি, সরকারি জনকল্যাণে অংশগ্রহণসহ কর জালের বিস্তারে পরোক্ষ ভূমিকা থাকবে। সম্পদ কর পরিবর্তনে মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে আর্থিক স্বস্তি আসবে এবং ধনীক শ্রেণিতে অধিক সারচার্জ আয় বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।
৮৮ লাখ ই-টিন ধারী থাকলেও এনবিআর হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ৩১ লাখ ৭০ হাজার ই-টিন ধারী রিটার্ন দাখিল করেছেন। এই সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন কতিপয় সরকারি সেবা গ্রহণে পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া টিআরপি এর জন্য নীতিমালা তৈরি হবে। এই পদক্ষেপসমূহ করের আওতা বৃদ্ধি, কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, কর সেবায় পেশাদারিত্ব আনয়ন করবে।
জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস, দেশীয় শিল্প সুরক্ষা, আমদানি বিকল্প শিল্প সুরক্ষা, রপ্তানি উৎসাহ, পণ্যের উৎপাদন ও যোগান স্বাভাবিক ও বৃদ্ধি, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তকে পণ্যমূল্যে স্বস্তিসহ আইসিটি ও অন্যান্য শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ, কর ও শুল্ক ছাড় বা আরোপ করা হয়েছে। শুল্ক ছাড়ে দাম কমার তালিকায় মাংস, দেশীয় এলইডি বাল্ব, সুইচ সকেট, মিষ্টি, অভিজাত পোষাক, ই-কমার্সের ডেলিভারি চার্জ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলোর ফলে কৃষি সহজীকরণ এবং দেশীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্প লাভবান হবে। অভিজাত পোষাকের শুল্ক হ্রাসে টেক্সটাইল শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিছু নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীতে যেমন- কলম, টয়লেট টিস্যু, মোবাইল ফোন ইত্যাদিতে ভ্যাট আরোপে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে এবং বাজেটের মূল লক্ষ্য মুদ্রাস্ফীতি রোধের বিপক্ষে যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, ভর্তুকি, কৃষি, স্বাস্থ্য অর্থাৎ যে খাতগুলো নিম্ন আয়ের জনগণ, ক্ষুদ্র মাঝারী শিল্পকে সুরক্ষা দিবে সেসব খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাজেটে খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য কর্মসূচিগুলোর আওতা বাড়বে। মুদ্রাস্ফীতি থেকে স্বস্তি দিতে খোলা বাজারে স্বল্প মূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যপ্তি বাড়ানো হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি রোধে এবং রাজস্ব আহরণের অনেক কৌশল উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়নে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমা সত্বেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘাটতি অর্থায়নে আভ্যন্তরীণ উৎসে চাপ অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা, কর প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য গতিশীল কৌশল, রিজার্ভ বাড়ানো, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি, শিল্পে জ্বালানী সরবরাহ ঠিক রেখে উৎপাদন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন সম-সাময়িক পরিস্থিতির উপর বাজেটে বলিষ্ট ভূমিকার কথা উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।
এই বাজেটের সাফল্য অবশ্যই অনেকটাই বাস্তবায়নের উপর নির্ভর করবে এবং রাজস্ব আহরণকে অগ্রাধিকারমূলক মেঘা প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

বাজেটে সাধারণ মানুষের
সামাজিক সুরক্ষায়
সুনজর দেওয়া হয়েছে
প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান
উপাচার্য, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেছেন, বাজেট প্রকাশের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানা সেক্টর থেকে প্রস্তাবনা সংগ্রহ করেছে। সেগুলোর ভালো-মন্দ ও সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে সমন্বয় করে জাতীয় বাজেট পেশ করা হয়। সেই দিক বিবেচনায় এবারের বাজেটে সাধারণ মানুষের সামাজিক সুরক্ষার সুনজর দেওয়া হয়েছে। ভালো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো খবর। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতিবছরের ন্যায়ে এবারেও নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আগের বারের তুলনায় বড় হয়েছে। অর্থাৎ টাকার পরিমান বাড়ানো হয়েছে। মানুষের জীবন যাত্রার প্রতিটি খাতেই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে খরচের সুনির্দিষ্ট খাতগুলোর বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করলে বাজেটের ভালো-খারাপ দিক পরিষ্কার হবে।
স্বাস্থ্য খাত প্রসঙ্গে সিকান্দার খান বলেন, আমার মতে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের দিকে আরেকটু নজর দেওয়া উচিত ছিল। এই মৌলিক চাহিদাটি বাজেটে অবহেলিত হয়েছে। কারণ কোভিড পরবর্তী আমরা দেখেছি সরকারি হাসপাতাল ও ডাক্তারদের যে স্বল্পতা রয়েছে তার অভিজ্ঞতা থেকে হলেও দেশের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট আরো বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ থাকা উচিত উল্লেখ করে সিকান্দার খান বলেন, মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য যেন সাধারণ মানুষের নাগালে থাকে তার নিশ্চায়তা বাজেটে আরো স্পষ্ট করে দিলে সাধারণ মানুষ বাজেটকে জনবান্ধব হিসেবে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করে নেয়। কারণ অনেক সাধারণ মানুষ এখনো মনে করে বাজেট মানে আবার পণ্যের দাম বাড়া। যেমন এবারের বাজেটে সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ার কথা রয়েছে। এটি মানুষের অপরিহার্য একটি জিনিস। আর গ্যাসের দাম এমনিতেই কয়েক দফায় বেড়েছে। তাই এটি না বাড়িয়ে অন্তত যে অবস্থায় আছে সেই দামে স্থির রাখার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখার দরকার ছিল।

 

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে
ও দেশীয় শিল্পকে সমৃদ্ধ
করতে সহায়ক হবে
মাহবুবুল আলম
সভাপতি, চিটাগাং চেম্বার

জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের প্রেক্ষিতে দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই বাজেট স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক হবে। পাশাপাশি আমদানিকে নিরুৎসাহিত করে দেশীয় শিল্পকে সমৃদ্ধ করতেও সহায়ক হবে। এছাড়া সার্বজনীন পেনশন চালু ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীদের ভাতা বাড়ানো, চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ২২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও চট্টগ্রামে চামড়া শিল্প নগরী স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই ।
গতকাল (০১ জুন) উত্থাপিত বাজেট উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চেম্বার সভাপতি বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, মোট আয় ৫ লক্ষ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৭শত ৮৫ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ২শত ৪৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩শত ৯৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ১ লক্ষ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয় হবে যা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, যা ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া মহিলা ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ টাকা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৫ লক্ষ টাকা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতাদের ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা এবং তৃতীয় লিঙ্গ করদাতাদের ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করহার নির্ধারণ করা হয়েছে যা চলমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে সহায়ক হবে।
নিট পরিসম্পদের মূল্যের ভিত্তিতে করদাতার সারচার্জ আরোপের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সীমা ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ, ব্যাংক, তামাকজাত পণ্য ও মোবাইল ফোন কোম্পানি ব্যতীত অন্য সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ নগদ ব্যয় সীমা ৩৬ লক্ষ টাকার শর্তসাপেক্ষে কর্পোরেট করহার ২.৫% কমানো হয়েছে যা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অঝঝঊঞ প্রজেক্টের আওতায় ৬ লক্ষের অধিক মানুষকে কারিগরি শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা খুবই প্রশংসনীয়। এই প্রজেক্টের আওতায় চট্টগ্রামে ভারী শিল্প কারখানাসহ ভবিষ্যৎ শিল্পায়নের কথা বিবেচনা করে চট্টগ্রামে ন্যূনতম ১ লক্ষ প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি করছি। রাজউক এবং সিডিএ’র আওতাধীন ও বর্হিভূত এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশনকালে যৌক্তিকভাবে উৎসে করহার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে যারফলে অবস্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন উৎস কর নির্ধারণের ফলে এ বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যা পরিহারে সুষম উৎস কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি।-বিজ্ঞপ্তি

 

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বৈশ্বিক
প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ বাজেট
প্রস্তাবনা যথোপযুক্ত ও সাহসী

খলিলুর রহমান
সভাপতি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খলিলুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, দীর্ঘদিন যাবত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, বিশ^ব্যাপী মূল্যস্ফীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের অর্থনীতিকে চলমান রাখতে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ ¯েøাগানে দেশের উন্নয়নে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সুচিন্তিত, জনকল্যাণমুখী ও সাহসী বাজেট প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্র্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বৈশি^ক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের বাজেট প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সময়ে যথোপযুক্ত এবং সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব, সুশাসন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতা এবং সদিচ্ছায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দুর্নীতি মুক্ত এবং সু-শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন সহায়ক হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে রাজস্ব আহরণের জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭/২৪ কর্ম ঘণ্টা এর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে এ লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হতে পারে। নিয়মিত কর প্রদানকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা সৃষ্টির উপর গুরুত্ব প্রদানসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু বিশ^ অর্থনীতিতে রপ্তানি বাণিজ্য মন্দা, তাই দেশের বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে ০ (শূন্য) শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বন্ড সমূহের আমদানি শুল্ক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে আদায় না করে বন্ডের মাধ্যমে ধাপে ধাপে পরিশোধের সুযোগ রাখলে শিল্প সমূহ আর্থিক সংকটের সম্মুখীন না হলে যথাযথ আমদানির সুযোগ থাকলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় কাস্টম হাউসে একত্রে শুল্ক পরিশোধ করতে হলে আর্থিক সংকটের কারণে আমদানি হ্রাস পাবে। ফলে শুল্ক আহরণ ও পণ্য উৎপাদন কমে যাবে। যা দেশের জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে ব্যাহত করবে।
বিদেশি এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রদানে যে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে, তার জন্য সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার দাবি জানাই। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি এবং প্রতি তিন মাস অন্তর কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য টার্গেট করে দিলে, সেই টার্গেট মতে কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হলে সেই দপ্তরের প্রয়োজনীয় জবাবদিহিতা থাকবে। না হলে ব্যয় বৃদ্ধি ও সময়ক্ষেপণ বাড়বে।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন