চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

গ্যাসের জন্যে হাহাকার, ক্ষুব্ধ গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ মে, ২০২৩ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

প্রায় গ্যাসবিহীন চট্টগ্রামে চরম ভোগান্তি আর শঙ্কা নিয়ে দিন পার করলেন নগরবাসী। ওয়াসার লবণাক্ত পানি, বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিংয়ের মধ্যে গ্যাস সরবরাহও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল রবিবার নানামুখী সমস্যায় পড়েন নগরীর বাসিন্দারা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে চলমান তীব্র গ্যাস সংকট আরও সপ্তাহখানেক থাকার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গত শুক্রবার রাতে মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। টার্মিনাল দুটি বন্ধ থাকায় জাতীয় গ্রিডে দৈনিক গড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শনিবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হতে শুরু করে। গতকাল রবিবার গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান- কেজিডিসিএল’র অধীন এলাকায় গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে গতকাল সরবরাহ করা হয় মাত্র ৬২ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে চট্টগ্রামজুড়ে গ্যাসের জন্য হাহাকার তৈরি হয়। রাউজান, শিকলবাহা, বাড়বকুণ্ড এলাকায় অবস্থিত গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় কাফকো এবং সিইউএফএল’র কার্যক্রমও।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন কেজিডিসিএল’র অধীন আবাসিকের প্রায় ৬ লাখ গ্রাহক। বাসা-বাড়িতে গ্যাস না থাকায় রান্না হয়নি অনেকের বাসায়। কেউ কেউ এলপিজি সিলিন্ডারসহ বিকল্প ব্যবস্থায় রান্না করলেও সেখানে গুণতে হয়েছে বাড়তি টাকা। হোটেলে ভিড় করেও খাবার না পেয়ে অনেকে বিস্কুট, পাউরুটি, কেকসহ শুকনো খাবার কিনে খান।

চট্টগ্রামের জন্য গ্যাসের কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা না করেই এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রাহকরা। তারা বলছেন, মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের উপর দিয়ে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এতে পুরো দেশ লাভবান হয়। এখন টার্মিনাল বন্ধ করে দেওয়ার পর জাতীয় গ্রিড থেকে কোনো গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে না। এটি চট্টগ্রামবাসীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ ছাড়া কিছুই নয়।

জাহিদ হাসান নামে একজন গ্রাহক বলেন, এটি দায়িত্বহীন কাজ। একদিন হলে কোনোভাবে ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু তাই বলে ৬-৭ দিন! অতীতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এভাবে গ্যাস সংযোগ বন্ধ ছিল না। মোখার কারণে ৬-৭ দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে বিষয়টি দুঃখজনক এবং হাস্যকর নয় কি? আরেক গ্রাহক রাসেল হাসান বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করেই হুট করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ কোনো সমাধান হতে পারে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- জাতীয় গ্রিড থেকে দৈনিক ১০০-১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করলেই চট্টগ্রামের সব আবাসিক এলাকায় রেশনিং করে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। এতে ৬ লাখ গ্রাহকের পরিবারের অন্তত ৩০ লাখ সদস্যের ভোগান্তি কমবে। তবে পেট্রোবাংলা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে এলএনজি টার্মিনাল চালু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন না হলেও চালু হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, ঝড়ে টার্মিনালের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে টেকনিক্যাল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটি টার্মিনাল চালু করতে ২-৩ দিন, অন্যটি চালু করতে সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে। দুটি টার্মিনাল চালু হওয়ার আগে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না।

পূর্বকোণ/

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট