‘কী এক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কেটেছে তা বলে বোজানো যাবে না। এখনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠি। করোনায় আক্রান্ত থেকে শুরু করে সুস্থ হওয়ার পরও খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পরও মনে হয়েছিল জেলখানায় ছিলাম। প্রথম প্রথম আশপাশের মানুষ থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজনরাও ভয়ে কাছে আসতে চাইতো না। এমন কষ্টের দিন যেন আর কাউকে কাটাতে না হয়, সবসময় আল্লাহ’র কাছে সেই দোয়া করি।’
কথাগুলো বলেন ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী হিসেবে শনাক্ত হওয়া মো. মুজিবুল হক। তিনি নগরীর দামপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সেইদিন রাতেই তাঁর নগরীর দামপাড়ার বাসাসহ আশপাশের বাসাগুলোও লকডাউন করে প্রশাসন। সে থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং শিশুসহ এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৩৭০ জন।
৩ বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরে মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘করোনা শনাক্ত হওয়ার চার-পাঁচ দিন আগে তীব্র জ¦রে আক্রান্ত হই। শরীরের তাপমাত্রা এত বেশি ছিল, প্রথম ক’দিন স্বাভাবিক ছিলাম না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়-পরিবার-আত্মীয় স্বজন তখন মনে করেছিল আমাকে জ¦ীন-ভূতের হাওয়া লেগেছে। যার কারণে কবিরাজ-হুজুর এনেও ঝাড়ফুঁক-পানি পড়া খাওয়ানো হয়েছে। পরে ৩ এপ্রিল প্রথমে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মধ্যরাতে আমি জানতে পারি, আমার করোনা হয়েছে। কিন্তু পুরো হাসপাতালে কোন রোগী ছিল না, চারদিকেই শুধু ফাঁকা। খুবই ভীতিকর অবস্থায় দিন কাটাতে হয়েছিল।’
পরিবার আরও বেশি কষ্ট পেয়েছিল উল্লেখ করে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী মুজিবুল হক আরও বলেন, ‘সুস্থ হওয়ায় ২২ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসি। কিন্তু তখনও জানতাম না- এতদিন আমার বাসা লকডাউন করা ছিল। বাসায় আসার পরও দিনগুলো কষ্টেই কেটেছিল। বাইরে থেকে কেউ আসতে পারতো না। খাবার থেকে শুরু করে বাজার সদাইগুলো আত্মীয়-স্বজনরা পেছনের দিক দিয়ে রেখে যেত। আমরা কেউ গিয়ে তা সংগ্রহ করতাম। ওই সময়ের পুরো দিনগুলোই বন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। আমার স্ত্রী এখনও বলে, আমাদেরকে বাসা থেকে বের হয়ে একটু সিঁড়ি ঘরেও যেতে দেয়নি। পুরোটাই ছিল চিড়িয়াখানার মতো অবস্থা।’
পূর্বকোণ/এসি