চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

মন্তব্য প্রতিবেদন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ তোমায় ভালবাসি

১ মার্চ, ২০২৩ | ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে একজন নবীন স্নাতক চিকিৎসক হিসেব বের হয়েছিলাম। মাতৃতুল্য শিক্ষায়তন থেকে বিদায় লগ্নে নিজেদেরকে Fabulous Fifth year হিসেবে আখ্যায়িত করে সারা ক্যাম্পাসকে CMC We Love you ব্যানার ফেস্টুনে সাজিয়ে দিয়েছি। চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলেও তাঁর মূল পরিচয় সে প্রাথমিকভাবে একজন এমবিবিএস স্নাতক, যা তার পাশে আমৃত্যু জুড়ে থাকে।
যে প্রতিষ্ঠানে নিরন্তর সংগ্রাম করে অমূল্য সম্পদ অর্জন করেছি সেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সুনাম আজ বিপন্ন। স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়ে তার বদনখানি আজ মলিন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) ৬২তম ব্যাচের চার শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে দুষ্কৃতিকারীরা। চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষে এই নির্যাতন চালানোর পর গুরুতর আহত দুজনকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্য ও সম্প্রীতির উপর কতিপয় ছাত্রনামধারী বিপথগামীা এমন অপকীর্তি আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের জ্ঞান প্রসার ও মেধা বিকাশের সুযোগকে ব্যাহত করছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ছাত্র ছাত্রী তাঁদের অসাধারণ মেধার বলে কঠোর প্রতিযোগিতায় সফল হয়ে চমেকে ভর্তি হয়েছেন। যাঁরা আজ বিপথগামী তাঁরাও নিশ্চয়ই অনেক মেধাবী। তাঁদের উদ্দেশে নিবেদন করি, দোহাই তোমরা তোমাদের এই মেধাকে অপব্যবহার করে ভিন্নমত পোষণকারীদের নিষ্ঠুরের দমন করো না। আমরা তোমরা সকলেই এই আলমা মেটার চমেকের সন্তান। এটি একটি মহান নার্সারি, আমরা সকলেই একটি মহান পেশায় কর্মরত হবার শিক্ষায় এখানে এসেছিলাম, এসেছি এবং আসব। Covid-19 Pandemic এ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে সারা বিশ্ব সম্মানিত Frontline Soldiers, Heroes ইত্যাদি বিভিন্ন উপাধি দিয়ে। এই সকল অকুতোভয় সৈনিকের হাতে অস্ত্র ছিল না, ছিল স্টেথোস্কোপ ও পাল্স অক্সিমিটার, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার পর্যাপ্ত পোষাক ছাড়াও অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অসহায় মানুষের প্রাণ বাঁচাবার সংগ্রামে, প্রাণ কেড়ে নেয়ার যুদ্ধে নয়।
ভিন্নমত মানবজাতির মধ্যে থাকবেই- আবাহনী বনাম মোহামেডান, আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল, আইফোন বনাম স্যামসাং, টয়োটা বনাম হোন্ডা; ক্যান্টিনে গরম চা, পিঁয়াজু ও আলুর চপ খেতে খেতে এগুলি নিষ্পত্তি করা সম্ভব। আমরা যেন এই বিভক্তির বিষ শরীরে বপন না করি, হৃদয়ে ঘৃনা নয় ভালোবাসা জন্মাই, পরস্পরের প্রতি সদয় থাকি, চোখে যেনো লেগে থাকে স্নেহের ছায়া। তবেই আমাদের শিক্ষাপীঠ CMC আমাদের মৌলিক শিক্ষা, প্রয়োজনীয় পেশাগত দক্ষতা, বুকভরা ভালবাসা ও নয়নভরা স্বপ্ন দেখাবে।
আসুন সবাই মিলেমিশে একটি সুষ্ঠু প্রাণচঞ্চল পরিবেশ তৈরি করি যাতে আমরা কেউই নয়ন জলে না ভাসি, আমরা যেনো গেয়ে উঠি মুখরিত জীবনের চলার বাকে, অজানা হাজার কত কাজের ভিড়ে, ছোট্ট বেলার শত রং করা মুখ সুর তুলে এই মনটি ঘিরে।
সবশেষে, সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার আকুল আবেদন, সকলে মিলে মিশে চমেকের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনি, সকলে মাথা উঁচু করে সুনামের সাথে প্রাণ ভরে মুক্তমনে শ্বাস নিক, আমরা সকলে একযোগে ‘We love you CMC’ বলে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠি।

ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ
প্রাক্তন ছাত্র, চমেক ব্যাচ-২০

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট