৮ বছর আগের (২০১৫-১৬ অর্থবছর) শিপিং বিলের বিভিন্ন খাতে ভ্যাট বকেয়া দেখিয়ে তা ২০২২ সালে এসে সংশ্লিষ্ট শিপিং এজেন্টদের কাছে দাবি করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ভ্যাটের এই বিলম্ব দাবির বিল পেয়ে রীতিমত হতভম্ব শিপিং এজেন্টরা। তাদের বক্তব্য, অতীতে শিপিং বিল পরিশোধ করার সময়েই বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারের যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাট আদায় করেছে। সে মোতাবেক শিপিং এজেন্টরাও বিদেশি জাহাজ মালিকদের (প্রিন্সিপ্যাল কোম্পানি) সাথে দেনা-পাওনা চুকিয়ে ফেলেছে।
এখন আট বছর আগের ভ্যাট কেন ও কীভাবে বকেয়া দেখানো হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন শিপিং এজেন্টগণ। উপরন্তু বিদেশি জাহাজ মালিকদের কাছ থেকেইবা কীভাবে বকেয়া ভ্যাটের কথা বলে পুনরায় অর্থ আনবেন, সেটাও বুঝতে পারছেন না তারা। এই আট বছরে অনেক শিপিং কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেছেন। তাদের টাকা কার কাছে চাইবেন শিপিং এজেন্টগণ।
এ বিষয়ে শিপিং এজেন্টদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ পূর্বকোণকে বলেন, আট বছর আগের শিপিং বিলে ভ্যাট বকেয়া দেখানো একেবারে অযৌক্তিক। সরকার যদি আইন অনুযায়ী ভ্যাট পাওনা থাকে তখন আট বছর আগে ওই সময়ে কেন দাবি করা হয়নি? সে সময় দাবি করা হলে আমরা সরকারের আইন দেখিয়ে প্রিন্সিপ্যালকে বোঝানোর একটা সুযোগ পেতাম। কিন্তু প্রিন্সিপালের সাথে আট বছর আগের লেনদেন আট বছর আগেই শেষ। এখন সেই ভ্যাট দাবি করার সুযোগ নেই। তিনি আরো বলেন, আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে জানিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারি আইন অনুযায়ী যেসব মাসুল ও ভ্যাট আদায় হয়েছে তার বর্ণনা দিয়েছি।
সরকারের আইন অনুযায়ী সব ভ্যাট পরিশোধ হওয়ার পর বর্তমানের শিপিং বিলের সাথে আট বছর আগের ভ্যাট যুক্ত করা বাতিলের আবেদন জানাই। শিপিং এজেন্টদের দাবি- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফে মোট ৬০টি ট্যারিফ আইটেম অন্তর্ভুক্ত। ২০০০ সালের মে মাসে বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার সার্কুলার এবং একই দপ্তরের ২০০৪ সালের অক্টোবরের সার্কুলার অনুযায়ী মোট ২৫টি ট্যারিফ আইটেমের উপর ১৫% হারে ভ্যাট আরোপ করে শিপিং এজেন্টদের থেকে যথানিয়মে ভ্যাট আদায় করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশের পরিপেক্ষিতে দুই মাস পর (১৩-০২-২০১৮) বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সার্কুলার জারি করে সকল ট্যারিফ আইটেমের উপর ১৫% হারে ভ্যাট আরোপ করার নির্দেশ দেয়। সে হিসেব বন্দর যেই বিল করেছে শিপিং এজেন্টরা তা পরিশোধ করেছে।
কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বিপরীতে শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে জাহাজ খাতে বিলের উপর ১৫% হারে বকেয়া ভ্যাট আদায়ের জন্য সকল শিপিং এজেন্টদের কাছে বিল পাঠাচ্ছে। কিন্তু বিলগুলো পুনরায় নিরীক্ষা করে দেখা যায় ওই সময়ে নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ খাতে পাঠানো বিলে যথাযথভাবে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে।
কিন্তু গত ২৮ আগস্ট কমিশনার, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, চট্টগ্রাম এর এক চিঠির মাধ্যমে সকল ট্যারিফ আইটেমের উপর ১৫% হারে ভ্যাট প্রয়োগ করায় বকেয়া ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বিভিন্ন সেবার ওপর ভ্যাট আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করে। এখানে বন্দরের নিজস্ব কোন নিয়ম নেই। সরকারি আদেশই পালন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সরকারি ভ্যাট দপ্তর থেকে বন্দরের ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিলগুলো খতিয়ে দেখেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী ওই সময়ে কিছু সেবার ওপর ভ্যাট আদায় হয়নি। যা এখন বকেয়া হিসেবে পাঠাচ্ছি। তবে কোন শিপিং এজেন্টই সেই বকেয়া পরিশোধ করছে না। আমরাও সেটি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও এনবিআরকে জানিয়ে দিচ্ছি। শিপিং এজেন্ট বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে এনবিআরের সাথে বৈঠক করে সমাধানের জন্য আলোচনা করতে পারে। বন্দর কর্তৃপক্ষ শুধু সরকারি নির্দেশই পালন করছে।
পূর্বকোণ/আর