
দূষণ, দখল, ভরাটের শিকার কর্ণফুলী ও হালদা নদী। প্রতিদিন ৩০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য পড়ছে এ দুইটি নদীতে। উচ্ছেদ হচ্ছে না কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা। উল্টো দখল হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা।
প্রায় ৫০০ বছর আগে গোড়াপত্তন ঘটে চট্টগ্রাম শহরের। কিন্তু পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে আজো একটি পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী হতে পারেনি এটি। উল্টো সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় সমস্যাগুলো দিনে দিনে বাড়ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থেকে পতেঙ্গার কর্ণফুলীর মুখ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোটিমার স্থান জুড়ে অন্তত ৩০০টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পেপার মিল, তেল শোধনাগার, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ট্যানারি, সার প্রস্তুতকারক, সাবান এবং সিমেন্ট তৈরির কারখানাও রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। অপরদিকে শতাধিক কারখানায় তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) থাকলেও উৎপাদন খরচ কমাতে মালিকরা সেগুলো তেমন একটা ব্যবহার করে না। ফলে হালদা-কর্ণফুলী নদীতে দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে।
এছাড়া কর্ণফুলীর দুই পাড়ে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা শুরু করলেও এক সপ্তাহ পরেই সেটি বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। পুনরুদ্ধার করা জমি পরিচালনায় সমস্যার অজুহাতে তারা অভিযান বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নানা কারণ ও সীমাবদ্ধতায় দুই তীরে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি এখনো।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘শহরের ও শিল্পকারখানার বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ হচ্ছে হালদা ও কর্ণফুলী নদী। কর্ণফুলী নদীর দু’পাশে কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। বিশেষ করে অক্সিজেন ও কূলগাঁও এলাকার শিল্পকারখানা ও আবাসিক বর্জ্য সরাসরি হালদা নদীতে পড়ছে।’ এদিকে নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট না থাকায় কঠিন ও তরল বর্জ্য সরাসরি হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে।
ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজের ওপর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের তথ্য অনুযায়ী নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে। এসব বর্জ্য সরাসরি নালা ও খাল হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। অথচ এ দুটি নদী ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। প্রতিদিন এ দুইটি নদী থেকে ওয়াসা ৪৩ থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। আগামীতে আরো ১০ থেকে ১২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন হবে। এছাড়া নগরীতে দৈনিক প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য হয়। এসব বর্জ্যরে একটি অংশও নদীতে গিয়ে পড়ছে। নগরীর তরল ও কঠিন বর্জ্য ছাড়াও নদীর দুই ধারের শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালও হালদা ও কর্ণফুলী গিয়ে পড়ে। এ কারণে ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে এ দুইটি নদী।
ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫১ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। ফলে এসব পয়ঃবর্জ্য, শিল্প বর্জ্য ও হাসপাতাল বর্জ্য মূলত খাল ও নালা হয়ে হালদা ও কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না হলে নগরীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস এ দুটো নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে। এতে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণসহ নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হবে। তবে এ সংকট নিরসনে ওয়াসা একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’
পূর্বকোণ/এসি