চট্টগ্রাম বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

কোটি টাকার ক্ষতিতে আড়াই শতাধিক চাষী

দুর্বৃত্তের হানায় ভেসে গেল ৩৫ হাজার মণ লবণ চকরিয়া

এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া

২৭ মে, ২০১৯ | ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে মাঠে মজুদ করা অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ।
শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়াস্থ বেড়িবাঁধের পাশের ২ নম্বর বড়মাঠ নামের লবণ মাঠে ঘটেছে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া স্থানীয় আড়াই শতাধিক প্রান্তিক লবণচাষি দেউলিয়া হবার উপক্রম হয়েছে। এতে লবণচাষিদের অন্তত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তাদের দাবি।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের মধ্যে আছেন বদরখালী ইউনিয়নের সাতডালিয়া ও নতুনঘোনা গ্রামের অন্তত ২৬০টি পরিবার। এসব পরিবারের মালিকানাধীন ২ নম্বর বড়মাঠ এলাকার মোট লবণ জমির পরিমাণ ৪৮০ একর (১২ শত) কানি। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এসব পরিবার উল্লেখিত জমিতে লবণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্ষাকালে বদরখালী সমিতি প্রকল্পটি মৎস্য চাষের জন্য ইজারা দেন। সমবায় আইনের আলোকে ইজারার টাকার একটি অংশ জমির মূল মালিকদের দেয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা সমিতির তহবিলে রক্ষিত থাকে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহ করতে।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিরা জানান, বদরখালী সমিতি থেকে লবণ মাঠের ওই জায়গা গত বছর দুইসনা মেয়াদে মৎস্য চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন সমিতির বর্তমান সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদার। এ বছর লবণ মৌসুম শেষ হওয়ার আগে লবণচাষিদের মাঠ ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন নুরুল আলম সিকদার ও তার লোকজন।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিরা অভিযোগ করে বলেন, ‘লবণ মাঠ ছেড়ে দিতে বারবার চাপ প্রয়োগ করায় মাঠে মজুদ থাকা লবণ ও মালামাল অপসারণে আমরা (চাষিরা) আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুুপুরে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের কাছে মৌখিক আবেদন জানাই। কিন্তু সমিতির কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে মাঠ থেকে মজুদ লবণ ও মালামাল সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে আসার একদিন পর শুক্রবার দুপুরে বেশিরভাগ চাষি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলে এ সুযোগে অতর্কিত ৮-১০ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল লবণ মাঠের চারপাশের তিনটি পলবোট খুলে দেয় এবং কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ কেটে দিয়ে লবণ মাঠে সামুদ্রিক পানি ঢুকিয়ে দেয়। তাতে স্থানীয় আড়াই শতাধিক চাষির অন্তত ৪৮০ একর লবণ মাঠ মুহূর্তে পানিতে তলিয়ে যায়। মসজিদ থেকে আসার আগেই তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়।
বদরখালী ইউনিয়নের নতুনঘোনা ও সাতডালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লবণ চাষি আবুল কাশেম, নুরুল আমিন, আমির হোসেন, রিদুয়ানুল হক, মোহাম্মদ আলী, মাহামুদুল করিম, জয়নাল আবেদিন ও মো. ইলিয়াছ অভিন্নভাবে অভিযোগ করে বলেন, অতর্কিতভাবে তিনটি পলবোট ছেড়ে দিয়ে ও কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ কেটে দেয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের উৎপাদিত লবণ ও মাঠ। এতে আড়াই শতাধিক চাষির মাঠে মজুদ অন্তত ৩৫ হাজার মণ লবণ পানিতে ভেসে গেছে। এ ঘটনায় আমাদের কমপক্ষে ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লবণ চাষিদের অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সভাপতি হাজি নুরুল আলম সিকদারের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বদরখালী সমবায় ও কৃষি উপনিবেশ সমিতির সম্পাদক জয়নাল আবেদিন খাঁন বলেন, লবণ মৌসুম শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। বর্তমানে বেশিরভাগ মাঠে লবণ মজুদ নেই। চাষিরাও মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। বদরখালী সমিতির ২ নম্বর বড়মাঠ প্রকল্পটি যেহেতু মৎস্য চাষের জন্য সমিতি কর্তৃপক্ষ আগে ইজারা দিয়েছেন, সেজন্য আমরা চাষিদের মাঠ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছি। তবে তিনি মজুদ লবণ সরিয়ে নিতে চাষিরা বৃহস্পতিবার সমিতি কার্যালয়ে এসে মৌখিকভাবে সময় চেয়েছেন বলে জানান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট