চট্টগ্রাম রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

প্রাণঢালা সংবর্ধনায় সিক্ত প্রবীণ শিক্ষক সুজিত কান্তি দে

প্রাণঢালা সংবর্ধনায় সিক্ত প্রবীণ শিক্ষক সুজিত কান্তি দে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির দৌলতপুর এবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুজিত কান্তি দেকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দিয়েছেন তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় নগরীর লালখানবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও সোনালী ব্যাংকের প্রাক্তন এজিএম মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবু আহম্মদ এবং ফিরোজ খান। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ঢাকা ব্যাংকের পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী আতিক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমারও একটা স্কুল ছিল। আমি পড়েছি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন কর্নেল মরিস ব্রাউন। তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী। ক্যাডেট কলেজের আমরা কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী তার সম্মানে স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল নামে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। একইভাবে শিক্ষককে সম্মান দিতে আজ এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন যারা করেছেন, তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পূর্বকোণ সম্পাদক আরও বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রদ্ধা, স্নেহ ও আন্তরিকতার সম্পর্ক আগের মতো নেই। এখনকার শিক্ষার্থীরা জেন-জি প্রজন্মের। আমাদের শিক্ষকদের উচিত চলমান প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা। আমার অনেক শিক্ষকবন্ধু আছেন। তারা বলেন, এখনকার প্রজন্মের প্রশ্ন ও উত্তরের ধরন অন্যরকম। আমাদের শিক্ষকদেরও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। একইভাবে পিতা-মাতা ও সন্তানদের মাঝেও আগের মতো সম্পর্ক নেই। সন্তানদের নিজস্ব একটা জগৎ আছে; সেটিও মা-বাবাদের বুঝতে হবে। কেননা এখনকার শিক্ষাক্রম আগের মতো না, পুরোটাই প্রযুক্তিনির্ভর।

কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, আমেরিকায় প্রতি তিন মাস পর পর কারিগরি-নির্ভর কর্মসংস্থানের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। ঠিক একইভাবে প্রযুক্তিকে সামনে রেখে আমাদের দেশেও কারিগরি শিক্ষাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সংবর্ধিত অতিথি সুজিত দে বলেন, আমার সামনে যারা আজ বসে আছে, তারা এখন অনেক বয়স্ক এবং সিনিয়র সিটিজেন। অথচ একদিন তারা ছোট ছিল। তাদের শৈশবের সেই ছোট ছোট চেহারাগুলো আমার চোখে এখন ভাসছে। আমি ছাত্রদের জন্য কী করতে পেরেছি জানি না, তবে আমি তাদের কাছ থেকে যা পেয়েছি তা অনেক। আমার ও আমার মেয়ের অসুস্থতা, পরিবারের আপদ-বিপদে ছাত্ররা যেভাবে পাশে ছিল, তা বলে শেষ করা যাবে না।

সভাপতির বক্তব্যে মুজিবুল হক বলেন, স্যার (সুজিত দে) আমাদের যে ভালোবাসা ও অনুশাসনের মধ্যে আগলে রেখেছিলেন, তা কখনও ভোলার নয়। আমরা শত শত শিক্ষার্থী স্যারের কাছে বছরের পর বছর বিনা বেতনে পড়েছি। স্যার অবসরের পর দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। সুদূর আমেরিকা থেকেও আমাদের সবার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রাখেন। স্মৃতিচারণের একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবুল কালাম, ডা. নাসিম হায়দার, রুনা তাসমিনা ও মো. মতিন মিয়া স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া মো. জোনায়েদ, ডা. শহিদুল্লাহ, কামরুদ্দিন বাহাদুর, ইঞ্জি. হোসেন ইমাম, নজরুল ইসলাম, মো. শামীমসহ দৌলতদিয়া এবিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

পূর্বকোণ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট