
ময়মনসিংহের ভালুকা ও লক্ষ্মীপুর জেলায় সংঘটিত দুটি পৃথক ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি মনে করে, এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং আইনের শাসন নিয়ে বড়ো ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভালুকায় ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে গার্মেন্টস কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে পরিকল্পিতভাবে ‘মব’ তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে তার মরদেহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র অবস্থায় ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই নৃশংসতাকে সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত ‘আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার’ ও ‘জীবনের অধিকার’-এর চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছে আসক। সংস্থাটি স্পষ্ট করেছে যে, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ থাকলে তা তদন্ত ও বিচারের দায়িত্ব আদালতের; কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না।
অন্যদিকে, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে তালা লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে ঘরের ভেতরে থাকা ৭ বছর বয়সী এক শিশু কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয়। আসক এই ঘটনাকে রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি শিশু অধিকার ও মানবিকতার এক চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
আসক মনে করে, এ ধরনের ঘটনাগুলো আর বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত না হওয়ায় এক ধরনের ‘দায়মুক্তির সংস্কৃতি’ তৈরি হয়েছে। কেবল আটকের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ হয় না; বরং এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতাগুলোও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই জাতীয় সহিংসতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। রাষ্ট্র যদি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তবে এ ধরনের অরাজকতা সমাজে আরও গভীরভাবে গেঁথে যাবে, যার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ