
দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) মধ্যরাতে ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের অভিযোগ এনে এই মামলা করা হয়।
তবে দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় রবিবার সকাল পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি বলে তেজগাঁও থানার ওসি ক্যশৈনু বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি, তাদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে, এগুলোর হিসাব করে তারা অভিযোগ দিবে বলেছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্ববায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আগুনও।
৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে হামলা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। প্রথমে পার্কিং লটের দিকে আগুন দেওয়া হয়। পরে তারা ভবনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।
এ সময় হামলাকারীরা ‘ভারতের দালাল’, ‘ভুয়া’,’ নারায়ে তাকবীর’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ভাঙো’ এসব স্লোগান দেয়। প্রয়াত সন্জীদা খাতুনের প্রতিকৃতি কেটে নষ্ট করার সময় ‘নাস্তিক’ বলে সম্বোধন করে।
মিলনায়তনে হামলাকারীর যা পেয়েছেন সেটিই ভাঙচুর করে। তবলা, হারমোনিয়াম, তানপুরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোড়ানোর পাশাপাশি ও তছনছ করা হয় বই, কাগজপত্র।
পুরো মনিটরিং সিস্টেম, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, স্পিকার, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয় ওই রাতে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম, কক্ষ ও অফিস রুমের বেশিরভাগ আসবাব ভেঙে ফেলা হয়।
বাদ যায়নি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষও। তাদের কক্ষের আলমারির গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল ভেঙেচুড়ে ওলট পালট করা হয়েছে। রমেশ চন্দ্র স্মৃতি মিলনায়তন, মূল মিলনায়তনসহ, শৌচাগারও রেহাই পায়নি ভাঙচুরের তাণ্ডব থেকে।
হামলাকারীরা সেখান থেকে বাদ্যযন্ত্রসহ নানা ধরনের সামগ্রী লুটপাটও করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাকারীদের মধ্যে একটি অংশ ছিল লুটপাটকারী। তারা বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার ভাঙচুর করে খুঁজেছে টাকা-পয়সা আছে কি না। কেউ কেউ কিছু বাদ্যযন্ত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে।
রাত আড়াইটায় যখন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নেয়, তার আগেই হামলাকারীদের তাণ্ডবে তছনছ করা হয় দেশের সংস্কৃতিচর্চার সবচেয়ে বড় এই প্রতিষ্ঠানটি।
এ হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের’ ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
একই রাতে কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, উত্তরায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ওসি ক্যশৈনু বলেন, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র: বিডি নিউজ
পূর্বকোণ/পিআর