চট্টগ্রাম সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মিরসরাইয়ের শুভপুর ব্রিজ

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত মিরসরাইয়ের শুভপুর ব্রিজ

পূর্বকোণ ডেস্ক

৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সৈন্য, অস্ত্র ও রসদ পরিবহন দুর্বল করতে হলে ধ্বংস করতে হবে শুভপুর সেতু। আবার সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত নিরাপদ রাখতে হলে এই সেতু রক্ষা করতে হবে পাকিস্তানি সেনাদের। কৌশলগত কারণেই ফেনী নদীর ওপর স্থাপিত এ সেতু মুক্তিযুদ্ধকালীন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। শুভপুর সেতু রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে ৪ দফা বড় যুদ্ধে জড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী। তবে একেবারে ধ্বংস করা যায়নি স্টিলের তৈরি মজবুত সেতুটি। গায়ে অসংখ্য গুলির চিহ্ন নিয়ে এখনো কালের স্মৃতি বহন করছে সেতুটি।

 

ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাকে ভাগ করেছে ফেনী নদী। দুই জেলাকে জুড়তে ১৯৫২ সালে পুরোপুরি ইস্পাতের কাঠামোয় সেতুটি তৈরি হয়। শুরুতে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২৯ মিটার। পরে দুপাশে নদী প্রশস্ত হলে ১৯৬৮ সালে আরও ২৪৯ মিটার স¤প্রসারণ করা হয় সেতুটি। ফলে এর মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৭৪ মিটার। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ও ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাকে যুক্ত করেছে এ সেতু।

 

মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন বইপত্র ও দলিলে উল্লেখ আছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ সেতুতে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন স্থানীয় জনতা। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় আক্রমণের পর ঢাকা ও কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে পাকিস্তানি সেনারা যাতে দ্রæত চট্টগ্রাম ঢুকতে না পারে সে জন্য স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেতুটি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। স্থানীয় করেরহাট বাজার থেকে আলকাতরা ও কেরোসিন তেল এনে সেতুতে আগুন ধরানো হয়। আগুনে ইস্পাতের তৈরি সেতুটি পুরোপুরি অচল না হলেও প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছেতে বেশ বিলম্ব হয় পাকিস্তানি বাহিনীকে।

 

এরপর থেকে সেতু রক্ষায় পাকিস্তানি বাহিনী ভারী অস্ত্রসহ পাহারা বসায়। ২৯ মার্চ স্থানীয় করেরহাট স্কুলের মাঠে এক সভায় বামপন্থী নেতা ওবায়দুল হক খন্দকার সেতুটি দখলে নিতে আহŸান জানালে ইপিআরের পশ্চিম অলিনগর বিওপি ক্যাম্পের সদস্য ও স্থানীয় যুবকেরা পাক বাহিনীর ওপর হামলা করেন। তবে সে হামলা সফল হয়নি তখন। পরে ৩১ মার্চ হাবিলদার মইনের নেতৃত্বে আরেক দফা মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে। এ যুদ্ধে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহজন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হন

 

২৩ এপ্রিল ফেনী শহরে ও ২৫ এপ্রিল করেরহাটে পরাজয়ের পর সেতুর দক্ষিণপাশ ছেড়ে উত্তর পাশে বাংকার করে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেসময় পাকিস্তানি সৈন্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ্য করে তীব্র আক্রমণ করে। একপর্যায়ে নদী পার হয়ে উত্তর পাড়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পড়ে ১০০ জন পাক সেনা প্রাণ হারায়। এ যুদ্ধে শহীদ হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও। ১২ মে সেতু দখলের জন্য দিনব্যাপী পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এ ছাড়াও যুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে এ সেতুকে কেন্দ্র করে অসংখ্য Ð যুদ্ধ হয়।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট