চট্টগ্রাম রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

৪ কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
ফাইল ছবি

৪ কারণে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

তাসনীম হাসান

৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

একমাস ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। ঝাঁজ বাড়তে বাড়তে এখন দেড়শ টাকা ছাড়িয়েছে মসলাটির দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানেই কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শুধু এবার নয়, প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর হলেই দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।

 

বছরের শেষ দুই মাসে কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, চার কারণেই এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। সেই কারণগুলো হলো উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; মৌসুমের শেষ পর্যায় ও বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি।

 

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নতুন আগাম পেঁয়াজ এখনো বাজারে পুরোপুরিভাবে আসতে শুরু করেনি। সেজন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহও আগের মতো নেই। এসব কারণে বেড়েই চলেছে পণ্যটির দাম। তবে এই বাড়ার মধ্যে স্বস্তির খবর হচ্ছে-আজ রবিবার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি বাজারে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ দেশের অন্যতম বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে আশা শুরু হয়েছে। এ কারণে অন্যান্য পেঁয়াজের দামও আগের চেয়ে অন্তত ১০ টাকা কমেছে। গতকাল মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১০৫ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা অন্যান্য পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ১১০-১২০ টাকায়।

 

খাতুনগঞ্জের অন্যতম বৃহত্তম পেঁয়াজের আড়ত মেসার্স কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাবেদ ইকবাল দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম অতিরিক্ত বেড়েছিল। তবে এই সপ্তাহের শুরুতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসায় সেটির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগের চেয়ে কমেছে দাম। আমদানি শুরুর পর কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়ে ওঠবে।’

 

যদিও বা পাইকারি বাজারের প্রভাব এখনো খুচরা বাজারে পড়েনি। গতকাল শনিবার বহদ্দারহাট-চকবাজার-দুই নম্বর গেট ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মানভেদে পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বহদ্দারহাট এলাকায় ভ্যানে করে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘আড়ত থেকে পেঁয়াজ কেনার পর বহদ্দারহাট পর্যন্ত আনতে খরচ পড়ে যায় ১৩৫-১৪০ টাকা। আমরা ৫ টাকা লাভে বিক্রি করতেছি।’

 

দাম বাড়ছে ৪ কারণে: ট্যারিফ কমিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়েছে সংরক্ষণের অভাব, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট ও মৌসুম শেষ হওয়ায় বছরের এই সময়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

 

সংরক্ষণের অভাব: সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম। কৃষকেরাই নিজ উদ্যোগে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। সরকারি সংরক্ষণাগার না থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় বলে চিহ্নিত করেছে ট্যারিফ কমিশন।

 

মৌসুমের শেষ পর্যায়: নভেম্বর ও ডিসেম্বর হলো পেঁয়াজ মৌসুমের শেষ পর্যায়। এ সময়ে কৃষকের মজুতও কমতে থাকে। সে কারণেও বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।

 

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য: কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত একাধিকবার হাত বদল হয় পেঁয়াজ। প্রতি ধাপেই মুনাফা করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।

 

বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট: গত আগস্টে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এমন যেমন পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মেহেরপুরসহ একাধিক জেলায় তুলনামূলক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বিপুল পরিমাণ আগাম পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এটিও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।

 

তবে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভারতে এখন পেঁয়াজের দাম ৩-৪ টাকা। দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কও কমিয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার অজুহাত দাঁড় করাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। কেননা ভারত থেকে এখন পেঁয়াজ আমদানি করতে পারলে কয়েকগুণ বেশি লাভ করতে পারবেন।’

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট