চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

শেখ হাসিনার সম্পদের প্রতি লোভ ছিল: রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক

শেখ হাসিনার সম্পদের প্রতি লোভ ছিল: রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক

অনলাইন ডেস্ক

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিয়মানুযায়ী প্লট বরাদ্দের কোনো আবেদন না করলেওও প্লটের দখল বুঝে পেতে আবেদন করেছিলেন; এতে বোঝা যায় যে তার সম্পদের প্রতি লোভ ছিল।

 

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনার প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 

বিস্মিত হয়ে তিনি এও বলেন, ‘তার সম্পদের প্রতি এত লোভ!’

 

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির পৃথক ৩ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে ২১ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ৫ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

 

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে শেখ হাসিনা আইন মানেননি। রাজউকের প্লট বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা তা করেননি। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনাকে প্লট দেওয়ার জন্য একটি ফাইল খোলা হয়। ২৬ জুলাই রাজউকের বোর্ড সভায় প্রাথমিকভাবে তাকে প্লট বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে প্লট অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়। একইসাথে শেখ হাসিনাকে, তার ও তার পরিবারের নামে রাজধানীর কোথাও সরকারি বা আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি মর্মে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়।

 

‘শেখ হাসিনা রাজউকে একটি হলফনামা দাখিল করেন। এই হলফনামায় তিনি তার স্বামীর নামে ১৯৭৩ সালে যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা গোপন করে শুধু তার নামে রাজধানীর কোথাও প্লট নেই মর্মে হলফনামা দাখিল করেন। এছাড়া এই হলফনামায় কোনো সাক্ষী, আইনজীবী বা নোটারী করা হয়নি। হলফনামা নোটারী না করলে তার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। তিনি সাধারণ কোনো নাগরিক নন। ওনার লিগাল অ্যাডভাইজার, ল মিনিস্টার, অ্যাটর্নি জেনারেল আছে।’

 

বিচারক তার পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট রাজউক শেখ হাসিনার নামে চূড়ান্তভাবে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। এরপর তাকে আরেকটি হলফনামা দিতে বলা হয়। এবারও তিনি একইভাবে হলফনামা দাখিল করেন। দাখিল করা দুটো হলফনামার একটিরও আইনগত কোনো ভিত্তি নাই।

 

এই বিচারক বলেন, ‘প্লট বরাদ্দের আবেদন না করলেও এবং আইনানুযায়ী বৈধ হলফনামা দাখিল না করলেও পূর্বাচলের ১৫১১ নং প্লটের দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ঠিকই আবেদন করেন। এতে বোঝা যায়, শেখ হাসিনার সম্পদের প্রতি লোভ ছিল। আমাদের প্রতিটি সেক্টরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে গেছে। দুর্নীতিবাজদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা প্লট বরাদ্দ না নিলে ওই প্লট অন্য একজন আবেদনকারী পেতেন। ফলে শেখ হাসিনা প্রতারণা করেছেন। এ রায়ের মাধ্যমে প্রকৃতরা যেন প্লট বরাদ্দ পান, সে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

 

পৃথক তিনটি মামলায় একটিতে শেখ হাসিনাসহ আসামি ১২ জন, আরেকটিতে জয় ও শেখ হাসিনাসহ ১৭ জন, বাকি আরেকটি মামলাতে পুতুল ও শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৮ জন।

 

প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ৬ টি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

 

গত ৩১ জুলাই শেখ হাসিনাসহ এই তিন মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

 

শেখ হাসিনার মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচলের নতুন শহরে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। তার ঢাকা শহরে বাড়ি থাকার পরও হলফনামায়ও তথ্য গোপন করেছেন। এর ফলে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্য পরস্পর যোগসাজশে পূর্বাচলের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ রাস্তার ৯ নং প্লটটি শেখ হাসিনার নামে রেজিস্ট্রি করেছে। সেজন্য দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৬১/৪০৯/৪২০/১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অপরাধ হয়েছে।

 

সজীব ওয়াজেদ জয়ের মামলার অভিযোগে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করেছে। এর ফলে প্লট বরাদ্দে আইন, বিধি, নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন হয়েছে। তার মা শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্য পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ১০ কাঠার ১৫ নাম্বার প্লটটি সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে বরাদ্দ দেয়। সেজন্য দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/ ৪০৯/৪২০/১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অপরাধ হয়েছে।

 

সায়মা ওয়াজেদের অভিযোগে বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করেছেন। এর ফলে প্লট বরাদ্দে আইন, বিধি, নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন হয়েছে। তার মা শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে ও অন্যকে লাভবান করার উদ্দেশ্য ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ১০ কাঠার ১৫ নাম্বার প্লটটি সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে টাকা বরাদ্দ দেয়। সেজন্য দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/৪২০/১০৯ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অপরাধ হয়েছে।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট