চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

কাট্টলীতে উদ্ধারের ১২শ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে হেলাফেলা

কাট্টলীতে উদ্ধারের ১২শ কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে হেলাফেলা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের কাট্টলী এলাকায় ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ১১৭ একর জায়গা দখলমুক্ত করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন এসব জায়গা পেতে চান ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য ১৯৭০ সালে দক্ষিণ পতেঙ্গা, দক্ষিণ কাট্টলী ও উত্তর হালিশহর এলাকায় ৬০১ দশমিক ৭৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের পর বিপুল পরিমাণ জায়গা অব্যবহৃত রয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে এসব জায়গা অবৈধভাবে দখলে নেয় প্রভাবশালীরা।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘উদ্ধার করা জায়গা ইজারার জন্য ৪১টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে ইজারা আপাতত বন্ধ রেখেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।’

 

পাউবোর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইজারা পেতে পুরোনো দখলদের অনেকেই আবেদন করেছেন। তবে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র, কাউন্সিলর ও নেতারা আবেদন করেননি। এবার নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

 

পাউবোর তথ্য বলছে, ৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ১২৫ একরের বেশি জায়গা ইজারার জন্য আবেদন করেছেন। অথচ পাউবো দখলমুক্ত করেছে ১১৭ একর জায়গা। নতুন ইজারার মধ্যে ৫০ একর জায়গার জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ৪০ হাজার মেট্রিকটন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আমদানিনির্ভর এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য জায়গা চেয়েছে বিপিসি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চেয়েছে ১৫ একর। প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এক দশমিক ৪৫ একর জায়গা চেয়েছে যমুনা গ্রæপের মনিকা নাজনীন ইসলাম। ব্যক্তি পর্যায়ে বেশি জায়গা চেয়েছেন ড. এম. মাসরুর রিয়াজ ৬ দশমিক ২৮৫ একর। সরওয়ার মোর্শেদ বেগ ও শাহ আলম ৫ দশমিক ৩৬ একর। সাহেদ আকবর ৫ একর। আকরাম সিদ্দিক চৌধুরী ও আকতার জাহান মুন্নী চেয়েছেন ৩ দশমিক ৯ একর। খতিজা আকতার চেয়েছেন ৩ দশমিক ৬৫ একর।

 

একাধিক ইজারার আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক ছাড়া বেশিরভাগ আবেদনকারী প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। রয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতাও। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার এবং শাক-সবজির চাষাবাদ করার জন্য এসব জায়গা ইজারা পেতে চান। অথচ এসব জায়গা ও আশপাশে রয়েছে ইট-কংক্রিটের ভারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

 

গত জুলাই মাসে জেলা প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর সহায়তায় বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিন দিন ধরে টানা উচ্ছেদ অভিযানে ১১৭ একর জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছিল। এসব জায়গায় ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার ইয়ার্ড, গাড়ির গ্যারেজসহ পাকা ও স্থায়ী স্থাপনা ছিল।

 

গত ১৫ দিন আগে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উচ্ছেদ করা জায়গা ফের বেদখল হয়ে যাচ্ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন স্থাপনা। পুরোনো দখলদাররা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে। চলছে সেই কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, স্কেভেটর ও প্রাইম মুভার ইয়ার্ডের কার্যক্রম।

 

পাউবো সূত্র জানায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ১১৭ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই মৌজায় প্রতি শতক জমি ১০-১১ লাখ টাকায় বেচাকেনা হয়। গড়ে ১০ লাখ টাকা করে হলেও উদ্ধার করা জমির মূল্য দাঁড়ায় ১১৭০ কোটি টাকা।

 

পরিকল্পনা নেই পাউবোর :

দখলমুক্ত জমিতে বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব পার্ক, সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং অস্তিত্বহীন তিনটি খাল খনন করে পুনরুদ্ধার ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সরকার বড় প্রকল্পে অনীহা প্রকাশ করায় আর এগোয়নি পাউবো।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উদ্ধার করা জমি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার কাটার ঘেরা দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে ঘেরা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তার চেয়ে ইজারা দিয়ে দিলে সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে।

 

বন্ধ ইজারা-প্রক্রিয়া :

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইজারা স্থগিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবৈধ দখলমুক্ত হওয়া জমি ইজারা বা লিজ প্রদান থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট