
কক্সবাজারের স্থানীয় এনজিওগুলোর সক্ষমতাকে অবজ্ঞা করায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ২০২৬-২০২৯ সালের অংশীদারত্বের সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ইউএনএইচসিআর স্থানীয়করণের আন্তর্জাতিক গাইডলাইন প্রকাশ করলেও, কার্যত স্থানীয় এনজিওদের বাদ দিয়ে কেবল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তহবিল দিচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর, ২০২৫) কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিসিএনএফ এর নেতারা এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, ইউএনএইচসিআর তাদের নতুন অংশীদারত্বের জন্য কক্সবাজারের কোনো স্থানীয় এনজিওকে তহবিল দেবে না, যা তাদের স্থানীয়করণ প্রতিশ্রুতির সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন, ইউএনএইচসিআর-এর এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় এনজিওদের সক্ষমতাকে অস্বীকার করেছে। সিসিএনএফ এর কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী আন্তর্জাতিক এনজিওদের (INGO) সমালোচনা করে বলেন, অ্যাকশন এইড বা অ্যাক্টেডের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের নিজ দেশের পরিবর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য স্থানীয় এনজিওগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে।
অধিকার কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট আবু মুসা বিশ্বব্যাংকের অনুমোদিত ৭০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ (স্থানীয়দের জন্য) ও অনুদান (রোহিঙ্গাদের জন্য) প্রকল্পে স্থানীয় এনজিও/সিএসও-দের অন্তর্ভুক্ত না করার বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে জাতিসংঘের একটি সংস্থা কর্তৃক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উন্নত আবাসন নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও শর্ত দেন, এই আবাসনগুলো অবশ্যই প্রিফ্যাব্রিকেটেড বা পূর্ব নির্মিত ঘর হতে হবে, কোনো স্থায়ী কাঠামো তৈরির অনুমতি দেওয়া যাবে না। নকশাটি স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় এনজিওদের সাথে পরামর্শ করে জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানান তিনি।
সিইএইচআরডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ ইলিয়াস মিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, উখিয়া ও টেকনাফে প্রতিদিন প্রায় ২৫ মিলিয়ন লিটারেরও বেশি পানি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় মানুষের ভবিষ্যতের পানির নিশ্চয়তা বিবেচনা করে এখনই ক্যাম্পে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে নাফ নদীর পানি ট্রিটমেন্ট বা পুকুর খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মতো বিকল্প ব্যবস্থা চালু করার উপর জোর দেন।
হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম দাবি জানান, বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘকে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে যে বিশ্বব্যাংকের তহবিলে স্থানীয় এনজিও/সিএসওগুলোর প্রবেশাধিকার কিভাবে নিশ্চিত করা হবে এবং কক্সবাজারের বাইরে থেকে ‘আমদানিকৃত’ কোনো এনজিও এই তহবিলের জন্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সিসিএনএফ-এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ—অর্ণব কক্সবাজারের নুরুল আজিম, এসবিএসকেএস আর নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন ও ইপসার হোসনে আরা রেখাসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বকোণ/পারভেজ