চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ১০ বছরে সরিষা আবাদ বেড়েছে ১৩ গুণ

চট্টগ্রামে ১০ বছরে সরিষা আবাদ বেড়েছে ১৩ গুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ নভেম্বর, ২০২৫ | ৪:২৩ অপরাহ্ণ

তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নেয় কৃষি অধিদপ্তর। সেই পরিকল্পনার সুফল হিসেবে চট্টগ্রামে বেড়েছে সরিষা আবাদ ও উৎপাদন। গত ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে ১৩ গুণ।

 

২০২২ সালে সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্প নেয়। এই উৎপাদন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়। সরিষা, তিল, সূর্যমুখী ও চিনাবাদামের আবাদ বাড়ানো এবং ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভরতা কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। চট্টগ্রামে ১০ বছরে সরিষা আবাদ বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ।

 

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৩৫১ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে (২০২৫ সাল) চট্টগ্রামে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমি। ১০ বছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ। তবে গত তিন বছরে (২০২২ সালের পর) উৎপাদন বেশি বেড়েছে। চাহিদা বেশি ও লাভ ভালো হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে সরিষা আবাদ বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

 

বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে সরিষা আবাদ করা হয়। ধান চাষ ছাড়াও সবজি চাষের সঙ্গে সরিষার চাষ করা হয়। এছাড়া সরিষা চাষের সঙ্গে মৌ-চাষও বেশ সাড়া পেয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে। একদিকে মধু আহরণ করে লাভবান হয় কৃষক। অন্যদিকে সরিষা চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ মৌসুমে ৭৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ফসল উৎপাদন হয়েছে ৯৩২ দশমিক ২৪ মে. টন। ২০২১-২২ মৌসুমে চাষ হয়েছে ৭১১ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৮৫৪ টন। ২০২২-২৩ মৌসুমে চাষ হয়েছে দুই হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে। ফসল উৎপাদন হয়েছে দুই ৫৭৬ টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে। ফসল উৎপাদন হয়েছে চার হাজার ৭৫০ টন। চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫ সাল) ৪ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ফসল উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৬৭৮ টন।

 

চলতি মৌসুমে বিনা জাতের সরিষা রোপণ করা হয় ৪১৯ হেক্টর জমিতে। চার হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে বারি জাতের সরিষা রোপণ করা হয়। চট্টগ্রামে ধান ও সবজির আবাদ হলেও সরিষার চাষ ছিল যৎসামান্য। কয়েক বছরে বিশেষ পরিকল্পনার ফলে আবাদ অনেক বড় হয়েছে। কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা চাষ করছেন।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, জেলার রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মিরসরাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় সরিষার বেশি আবাদ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে হাটহাজারীতে ৯০০ হেক্টর, রাউজানে ৮৫০ হেক্টর, মিরসরাইয়ে ৬৫০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩৯৯ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৩১৭ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২৬৫ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর নাগাদ তিন বছরে তেল আমদানির হার ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ হ্র্রাস করা যাবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের (ইউএসডিএ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩২ লাখ টন। আর মাথাপিছু ভোজ্যতেল গ্রহণের হার বছরে ১৭ কেজি। এ চাহিদার ৫০ শতাংশ পাম তেলে পূরণ হয়। ২৮ শতাংশ চাহিদা পূরণ হয় সয়াবিন তেলে। সরিয়া তেলে পূরণ হয় ১৯ শতাংশ তেলের চাহিদা। বাকি ৩ শতাংশ বিভিন্ন তেলের মাধ্যমে পূরণ হয়ে থাকে।

 

অন্যান্য তেলের তুলনায় সরিয়া তেল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। পুষ্টি উপাদান ভালো। মানুষের মধ্যেও দিন দিন সচেতনতা বাড়ছে। ফলে সরিয়া তেলের বিক্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট