
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা জানিয়েছিলাম যে, ড. ইউনূসকে আদেশ জারি করতে হবে। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এটা দিতে পারবে না। আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি পেয়েছি, কিন্তু নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা আমরা পাই নাই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের মাধ্যমে সরকার ‘তরকারির বাটি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক চামচ করে ভাগ’ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সরকার জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়েছে। সরকার এখানে দরদ দেখিয়েছে, কিন্তু কোনো দায় দেখায় নাই। অর্থাৎ আপনার যখন কোথাও কমপ্যাশন (দরদ) থাকবে, আপনার রেসপন্সিবিলিটি (দায়) নিতে হবে। সরকার এখানে তরকারির বাটি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক চামচ এক চামচ করে ভাগ করে দিয়েছে। বিএনপিকে এক চামচ দিয়েছে, জামায়াতকে এক চামচ দিয়েছে। কিন্তু জনগণের যে প্লেট, ওটা খালি হয়ে গেছে।’
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, এই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাহাত্তরের যে ফ্যাসিবাদী সংবিধান, সেই সাংবিধানিক কাঠামোকে পরিবর্তন করে জনগণের একটা কাঠামো নিয়ে আসতে। যাতে নতুন করে কেউ হাসিনার মতো জনগণের ওপর গুলি চালাতে না পারে। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, এক হাসিনা যাওয়ার পরে আরেক হাসিনা আসার জন্য আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।’
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘এই যে আদেশটা হলো, এই আদেশের মধ্য দিয়ে আমরা মৌলিক সংস্কারের পথে যেতে পারব না। এখানে বাংলাদেশে একটা সাংবিধানিক সংকট আবার রয়ে গেল।’
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা জানিয়েছিলাম যে, ড. ইউনূসকে আদেশ জারি করতে হবে। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এটা দিতে পারবে না। আমরা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি পেয়েছি, কিন্তু নৈতিক ভিত্তির জায়গাটা আমরা পাই নাই। এই জুলাই সনদের সরকার শুরুতে গণ-অভ্যুত্থান শব্দটা উচ্চারণ করেছে। সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে প্রকাশ, সেটা জনগণ থেকে নিয়েছে। কিন্তু সেই সার্বভৌম অভিপ্রায়ের যে সাইন, যার মাধ্যমে দিয়েছে, সে কিন্তু জনগণের ওপরে কয়েক দিন আগে গুলি চালিয়েছিল। ফলে সরকার এখানে আইনি ভিত্তি দিল শেখ হাসিনা ও আওয়ামী ফ্যাসিজমের অংশ যে, তার হাত দিয়ে এই জুলাই সনদকে সে অপবিত্র করেছে।’
বিএনপিকে দোষারোপ করে নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা চুপ্পুকে সরাইতে চাইলাম, বিএনপি বাধা দিল। সংস্কার কমিশনে আইসা গুন্ডামি করল। এরপরে জুলাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের দিন বলল যে, ‘‘আমি সব মানি তালগাছ আমার’’। কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে প্রক্রিয়াও তারা ঘোলাটে করে রাখল।’
দুটি রাজনৈতিক দল সংস্কারকে নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন নাসীরুদ্দীন। তিনি বলেন, ‘দুইটি দল এই সংস্কারের যে প্রক্রিয়া, সেটা নিজেদের ভোটব্যাংক বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করল। ফলে এই সংস্কারপ্রক্রিয়াটা ভোটব্যাংক বাড়ানোর একটা টুলস তাদের কাছে। কিন্তু এনসিপি মনেপ্রাণে বাংলাদেশে মৌলিক সংস্কার নিয়ে আসতে চায়। সেই জন্য আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে শিক্ষা নিয়ে সেখানে সাইন করতে যাইনি।’
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ