চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সবার দৃষ্টি দুই ইস্যুতে

সবার দৃষ্টি দুই ইস্যুতে

মোহাম্মদ আলী

১৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন দুই ইস্যুতে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে- সেটি দেখার অপেক্ষায় ক্ষণ গণনা করছে দেশের জনগণ। অপরদিকে আজ ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের ডাকা ‘ঢাকায় লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে জনমনে ভর করেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সব মিলে আলোচ্য দুই ইস্যুই এখন পরিণত হয়েছে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলো যখন পাল্টাপাল্টি অবস্থানে, ঠিক তখনি আজ ‘১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় গত তিনদিন ধরে বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আজ ঢাকায় কী হবে- এ নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠার শেষ নেই।

 

সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় কবে হবে সেটি আজ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করার কথা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। এরই মধ্য বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করায় ১৩ নভেম্বর ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন তারা এ কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। এই পরিস্থিতিতে স্কুলসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার অনলাইন ক্লাস নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

 

এদিকে গত ১১ নভেম্বর ঢাকায় জামায়াতসহ ৮ দলের সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘যারা জুলাই বিপ্লব মানবে না, তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই। ২৬-এ নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে নভেম্বরে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের ভিত্তি দিতে হবে। আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ কিন্তু তার এই বক্তব্যের পর একই দিন সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদের বাইরে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সনদে স্বাক্ষরকারী কোনো দলের জন্য তা মান্য করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। সেই ক্ষেত্রে সব দায়দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তাবে।’

 

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি এসব বক্তব্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদের আজ ১৩ নভেম্বরের বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ মেনে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫, নাকি অধ্যাদেশ জারি হবে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণভোট আগে হবে, নাকি নির্বাচনের সঙ্গে হবে- এই সিদ্ধান্তও উপদেষ্টা পরিষদে হবে। তবে সিদ্ধান্ত জানানো হবে আরও দুয়েক দিন পর।

 

সূত্র জানায়, দেশের বেশির ভাগ মানুষের নজর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের দিকে। সরকারের সিদ্ধান্তের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ওপরই দেশের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্ভর করছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা পরস্পরকে হুমকি ও পাল্টা হুমকির সুরে কথা বলেছেন। এ অবস্থায় দল দুটির দাবি মানার ক্ষেত্রে সরকার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। এজন্য কয়েকটি প্রস্তাব সরকার বিবেচনায় নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। প্রথমত, সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে করা। এছাড়া পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে গঠিত হবে সংসদের উচ্চকক্ষ। গণভোটে জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলোর ওপর বিভিন্ন দলের দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সনদ বাস্তবায়নে ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেটিও তুলে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু আগামী সংসদের জন্য সরকার একটি বিল তৈরি করে দিতে পারে।

 

সূত্র আরো জানায়, সনদ বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে কঠোর অবস্থান দেখালেও পর্দার আড়ালে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এর বাইরে তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট