
উৎপাদন ভালো হওয়ায় দেশে এতদিন আমদানি পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। ফলে বিদেশ থেকে পেঁয়াজও এসেছে খুব কম। কিন্তু এখন দেশে পেঁয়াজের মৌসুম না হওয়ায় টান পড়েছে সরবরাহে। এতে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে অনেক। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ হাজার টন। গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) একই সময় আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন। অর্থাৎ এই সময়ে গত বছরের তুলনায় ২ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ কম এসেছে। শতকরা হিসেব করলে যা প্রায় ৯৫ শতাংশ কম।
এদিকে চট্টগ্রামের বাজারে হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দেশের অন্যতম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে খুচরা বাজারÑসবখানেই এখন ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। কিন্তু চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই মানভেদে খুচরা বাজারে ১১০-১২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাইকারি বাজারে দাম ১০০ টাকার আশপাশে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। সবমিলিয়ে খুচরা বাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। এ কারণেই বেড়েছে দাম। নভেম্বরজুড়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। কেননা আগামী ডিসেম্বরে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হবে।
এখনো দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজার চলছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, বাজারে এখন আমদানি পেঁয়াজ নেই। দেশীয় পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে। আমদানির অনুমতি মিললে হয়তো দাম কিছুটা কমবে।
দাম বাড়ায় ক্রেতারা সাময়িক কষ্টে পড়লেও আমদানি না হলে দেশের কৃষকেরা অবশ্য লাভবান হবেন মনে করছেন আড়তদাররা। তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে। এবার কৃষকেরা ভালো দাম পেয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, কৃষকেরাও লাভবান হবেন।
বহুবছর ধরে দেশের বাজার ছিল আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। আমদানির বেশিরভাগই আসতো পাশের দেশ ভারত থেকে। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছর থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ায় সরকার। সেটির সুফল মিলেছে। চট্টগ্রামেও বেশ ভালো পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে এখন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি-১০২ হেক্টর। লক্ষ্য অনুযায়ী আবাদ হলে ৭৯২ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামে উৎপাদন হওয়া পেঁয়াজ দিয়েই এ অঞ্চলের বাজারের চাহিদা মিটবে।
বাজারে সাধারণ ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসে। এরপর জানুয়ারিতে রাজবাড়ি ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বাজারে এসে যায়। সেটি সরবরাহের মধ্যেই মেহেরপুর, জামালপুরসহ অন্যান্য জেলার পেঁয়াজও বাজারে আসে। গত বছর থেকে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার পেঁয়াজও।
কৃষকদের কথা ভেবে, সরকার এখনই পেঁয়াজ আমদানির কথা ভাবছে না। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই মাসেই ৭৫ হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। নতুন দেশীয় সরবরাহ বাজারে এলে দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই আশায় আছেন ক্রেতারা।
পূর্বকোণ/ইবনুর