
নিউইয়র্কে চলছে এক ঐতিহাসিক ভোটযুদ্ধ। প্রগতিশীল রাজনীতির তরুণ মুখ জোহরান মামদানি আবারও ভোটের ময়দানে তাঁর জয়-পরাজয়ের ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু যেভাবে নিউইয়র্কের রাজনীতি আজ নৈতিকতার এক নতুন সংজ্ঞা পাচ্ছে, তাতে ফলাফল যাই হোক, এই নির্বাচন ইতিমধ্যেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।
বাঙালি ভোটারদের নতুন চেতনা
কুইন্স ও আস্টোরিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশি ভোটারদের উপস্থিতি এখন নিউইয়র্কের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক দৃশ্যমান শক্তি। তাঁরা জোহরান মামদানির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন, ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের আহবান জানিয়েছেন মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য।
তাদের কাছে জোহরান কেবল একজন মুসলিম বা দক্ষিণ এশীয় প্রার্থী নন; তিনি এমন এক প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন, যারা রাজনীতিকে পুনরায় নৈতিক ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনতে চায়।
গাজায় চলমান গণহত্যার নিন্দা, শ্রমিক ও অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্নে জোহরানের দৃঢ় কণ্ঠ, এসবই তাঁকে এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে এক নৈতিক প্রতীক করে তুলেছে।
ইহুদি সম্প্রদায়ের নৈতিক সংহতি
মার্কিন রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ যে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া সত্তে¡ও জোহরান মামদানিকে সমর্থন করেছেন অনেক প্রগতিশীল ইহুদি ভোটার ও সংগঠন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, গাজার শিশুদের হত্যার প্রতিবাদ মানে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো, কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। এই সংহতি দেখিয়ে দিয়েছে নিউইয়র্কে এখন ধর্মের নয়, ন্যায়ের রাজনীতি চলছে।
ইসলামী মূল্যবোধ ও মানবতার সেতুবন্ধন
জোহরান মামদানি বারবার বলেছেন, ‘মানবতার পক্ষে অবস্থানই প্রকৃত বিশ্বাস’। এই বার্তাই তাঁকে আলাদা করেছে প্রচলিত রাজনীতিবিদদের ভিড় থেকে। ইসলামের শিক্ষায় যে ন্যায়-সাহস-সমতা, তারই আধুনিক রূপ যেন তাঁর রাজনীতি।
আজকের বিশ্বে যেখানে রাজনীতি প্রায়শই অর্থ ও স্বার্থের খেলায় পরিণত, সেখানে জোহরানের মতো তরুণ নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রাজনীতি মানে জনতার মর্যাদা রক্ষা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ।
কাউন্টিংয়ের প্রাক্কালে এক ঐতিহাসিক প্রতীক্ষা
নিউইয়র্কে যখন ব্যালট বাক্স খুলে গণনা শুরু হবে, তখনই নির্ধারিত হবে এই প্রগতিশীল তরঙ্গের ভবিষ্যৎ দিক। কিন্তু আজই স্পষ্ট, জোহরান মামদানি এক নৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যার প্রতিধ্বনি পৌঁছে গেছে ফিলিস্তিন থেকে কুইন্স পর্যন্ত।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায় যেমন গর্বিত, তেমনি তারা দেখছে একজন তরুণ মুসলিম নেতা কীভাবে মার্কিন রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনছেন বিবেকের মাটিতে।
ফলাফল ঘোষণার আগেই বলা যায়, জোহরান মামদানি এখন এক ধারণার নাম যে ধারণা বলে, সত্য ও সাহসের পক্ষে দাঁড়ানোই মানবতার আসল বিজয়।