
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে গমের দাম এখন বিশ্ববাজারে তিন বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু এর তেমন প্রভাব নেই বাজারে। উল্টো খোলা ও মোড়কজাত-দুই ধরনের আটার দাম বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সমন্বয় করছেন না। গম সস্তা হলেও দেশে আটার দাম বাড়তি রয়ে গেছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি ভিন্ন। তাদের কথা, গমের দাম কমলেও ডলার ও পরিবহন খরচ বেড়েছে, ফলে দাম কমানো যাচ্ছে না।
গতকাল নগরের বিভিন্ন খুচরা দোকানে ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে যে মোড়কজাত আটা (দুই কেজি) কেনা যেত ১০৫-১১০ টাকায় সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। আর খোলা আটার কেজি ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০-৫২ টাকা পর্যন্ত। এর আগে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে আটার দাম এক দফা বেড়েছিল। তখন দুই কেজির মোড়কজাত আটা ৯০-৯৫ থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছিল। খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছিল ৪৫-৪৮ টাকা। মাঝে আটার দাম ২-৩ টাকা ওঠানামা করে। কিন্তু এখন হঠাৎ করে মোড়কজাত ও খোলাবাজারে আটা ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
২০২২ সালে যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গমের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছিল। স্থানীয় বাজারেও তার আঁচ লেগে আটা হয়ে উঠেছিল ‘দামী খাদ্য।’ কিন্তু এরপর তিন বছর ধরে বিশ্ববাজারে গমের দাম কমলেও দেশে সেই অনুপাতে কমেনি আটা। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
বহদ্দারহাটের খাঁজা রোড এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকালে প্রতিদিন আটার রুটি আর আলু ভাজি খাই। কারণ এই দুটো বাজারে সস্তা। কিন্তু কদিন আগে আটা কিনতে গিয়ে দেখি দাম বেড়ে গেছে। এখন আটার রুটি খাওয়াও মনে হয় আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১৬ মে বিশ্ববাজারে প্রতি টন গমের দাম সর্বোচ্চ ৪৫৭ ডলারে ঠেকে। এরপর কমতে কমতে চলতি বছরের ২০ অক্টোবরে এসে সেটি ঠেকে ২১৮ ডলারে। সে হিসাবে তিন বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে গমের দর কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আটার দাম কমেনি দেশে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর দেশে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ৫৫-৫৮ এবং প্যাকেট আটার দাম ৫৮-৬০ টাকা ছিল। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে গমের দাম অনেক কমলেও আটার দাম কমেছে খুব কম।
খাতুনগঞ্জের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম কমলেও ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমাদের খরচ বেড়েছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে ডলারের দাম ছিল প্রায় ১০৬ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম প্রায় ১২২ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি ডলারের দর বেড়েছে ১৬ টাকা। সেজন্য গমের আমদানি খরচও বেড়েছে। এখন আবার পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। সবমিলিয়ে বিশ^বাজারে কমলেও আমরা সেভাবে কমাতে পারি না।’
সরকারের দুর্বল তদারকির কারণে গুটিকয়েক কোম্পানি ভোক্তাকে জিম্মি করে রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন খুব দ্রæত। এখন বিশ্ববাজারে গমের দাম কমেছে। কিন্তু দেশে আটার দাম কমানোর বেলায় তারা চুপ।’
পূর্বকোণ/ইবনুর