চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে সাত আসন ঘিরে আলোচনা তুঙ্গে
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিএনপি প্রার্থী

সবুজ সংকেতের প্রক্রিয়া থেমে গেছে জুলাই সনদ বিতর্কে

মোহাম্মদ আলী

১ নভেম্বর, ২০২৫ | ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

অক্টোবর মাসেই প্রায় ২০০ প্রার্থীকে গ্রিন সিগনাল দিবে বিএনপি। তাতে তোড়জোড় ও দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। একইসাথে বাড়ে তাদের অনুসারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে চাপা পড়ে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দেওয়ার প্রক্রিয়া। তাই ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দিতে পারেনি বিএনপি।

 

বিএনপি সূত্র জানায়, দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৬টি আসনের ১১৮ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাথে ভার্চুয়ালি সভা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ৫৯ মনোনয়ন প্রত্যাশীও ছিলেন। ওই সভার পর তাদের তোড়জোড় বেড়ে যায়। অনেকে গত কয়েকদিন ধরে অবস্থান করছেন ঢাকায়। প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া সম্ভাব্য জায়গায় তারা সমানে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুটি সামনে চলে আসায় এটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিএনপি নীতি নির্ধারকেরা। তাই বিএনপি চূড়ান্তকৃত প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দেওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটা থমকে যায়। তবে বিএনপির অপর একটি সূত্র বলছে- দলটি যে কোন সময় চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দিতে পারে। এতে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে পড়ে কিংবা কারা মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই দলটির নেতাকর্মীদের।

 

সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে থেকে চট্টগ্রাম- ১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি বিএনপির শরিক দল এলডিপি-কে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তাই এ আসন থেকে আপাতত বিএনপি কারো নাম ঘোষণা নাও করতে পারে। চট্টগ্রামের অবশিষ্ট ১৫ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টি আসনে একক প্রার্থী অনেকটা নিশ্চিত করেছে দলের মনোনয়ন বোর্ড। অপর ৫টি আসনের প্রত্যেকটিতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুই ও তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে জোর লড়াই চলছে। এ আসনগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (স›দ্বীপ), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) ও চট্টগ্রাম- ১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া)। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসন দুটি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জন্য সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। এ কারণে ওই দুই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউকে ২৬ অক্টোবর ঢাকার গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ের সভায় ডাকা হয়নি। ওই দিনের সভায় চট্টগ্রামের অপর ১৪ আসনের ৫৯ মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ডাকা হয়। এখন তাদের মধ্যে থেকে আসনওয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা দেওয়ার সর্বশেষ প্রস্তুতি চলছে।

 

জানতে চাইলে দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম পূর্বকোণকে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট ইস্যুতে দলের নীতি নির্ধারকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। একইসাথে বিএনপির একক প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজও চলছে। প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হলে যে কোন সময় ঘোষণা হতে পারে।’

 

এদিকে বিএনপির অপর এক সূত্র জানায়, প্রার্থী নির্বাচনের জটিলতা শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, জোটের সঙ্গেও আছে। যেসব আসনে কোন্দলের আশঙ্কা প্রবল এবং একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী আছে, সেসব আসনে এখনই প্রার্থী চূড়ান্ত করছে না বিএনপি। এছাড়া জোটের শরিকদেরও আসন দিতে হবে। তাই এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে সময় নিচ্ছে বিএনপি। গত ২৬ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ৫৯ মনোনয়ন প্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন। তাদের অনেকেই মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আলোচনায় রয়েছেন, তারা হলেন-

 

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই): উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন. উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী।

 

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি): উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ ছালাউদ্দিন এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জী।

 

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুল রহমান ভূঁইয়া মিল্টন, সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট আবু তাহের, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরিকুল আলম তেনজিন, বিএনপি নেতা মোস্তাফা কামাল পাশা এবং ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক রফি উদ্দিন ফয়সাল।

 

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড): এ আসনে ডাক পেয়েছিলেন দলের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমানে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী এফসিএ ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন। তবে বিদেশে থাকায় আসলাম চৌধুরী ওই সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

 

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও বায়েজিদ): বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক এবং সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা।

 

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার এবং উত্তর জেলা বিএনপি নেতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সিকদার।

 

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া): বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু আহমেদ হাসনাত।

 

চট্টগ্রাম- ৮ (চান্দগাঁও, বোয়ালখালী ও পাঁচলাইশ আংশিক): মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।

 

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া): চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলহাজ শামসুল আলম, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম এবং নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল। তবে এ আসনেও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ আবু সুফিয়ান মনোনয়ন দৌঁড়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

 

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া): দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এনামুল হক এনাম, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দ সাদাত আহমেদ।

 

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী): দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মামুন মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ আলী আব্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান।

 

চট্টগ্রাম- ১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক): বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম রাহী।

 

চট্টগ্রাম- ১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া): দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।

 

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা এডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট