চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

এক যুগে সড়কে মৃত্যু এক লাখ ১৬ হাজার
ফাইল ছবি

এক যুগে সড়কে মৃত্যু এক লাখ ১৬ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ অক্টোবর, ২০২৫ | ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বিগত একযুগে সড়কে ৬৭ হাজার ৮৯০টি দুর্ঘটনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও এক লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংস্থাটি বলছে, স্বাধীনতার আগে দেশে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নৌ এবং রেলপথ প্রধান বাহন হিসেবে ৮০ শতাংশ, সড়কে ২০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ছিল। তাই সড়কে দুর্ঘটনা ২০ শতাংশে সীমিত ছিল। স্বাধীনতার পরে সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে লুটপাট, সড়কে চাঁদাবাজি, বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে নতুন নতুন সড়ক নির্মাণ করে ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত সড়কে হবার কারণে দুর্ঘটনাও ৮০ শতাংশ বেড়েছে।

 

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কের বিশৃঙ্খলা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, লাইসেন্সবিহীন চালক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক, সড়কে ত্রুটি, চালকের মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গতি, অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একযুগে দেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত ও ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছে। দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র বলছে হতাহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

 

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী নৌ ও রেলপথের ব্যবহার বন্ধ করে একের পর এক সড়ক স¤প্রসারণ, সড়কে ব্যবহার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিবর্তে সড়কের উপর একচেটিয়া চাপ বাড়ানো, সে তুলনায় সড়কে ম্যাস ট্রানজিট বাড়ানো হয়নি। পরিবহনের ভয়াবহ সংকট পুঁজি করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, স্থানীয় গ্যারেজে তৈরি নসিমন-করিমন, পার্শ্ববর্তী দেশের তৈরি মাহিন্দ্রা, পিকআপভ্যানকে লেগুনা হিসেবে বানিয়ে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহারের কারণে বাস নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে।

 

এ পরিস্থিতিতে নিরাপদ সড়ক দিবস সামনে রেখে ১২ টি সুপারিশ করেছেন সংস্থাটি। তা হলো- হারিয়ে যাওয়া নৌ ও রেলপথ সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত যাতায়াত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। চাঁদাবাজি ও অনিয়ম-দুর্নীতি, মালিক-শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবহনখাত আপাদমস্তক সংস্কার করতে হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানজিট (পাতাল মেট্রোরেল) এর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগে ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (আলাদা উন্নতমানের বাস লেন) লেন চালু করতে হবে। সারাদেশে জেলা শহর থেকে উপজেলায় মানসম্পন্ন বাস দিয়ে শক্তিশালী বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা আমদানি ও বিপণন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। চালকদের রাষ্ট্রের খরচে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উন্নত দেশের আদলে ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তুলতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার মামলা সরকারি উদ্যোগে আমলে নিতে হবে। প্রতিটি হতাহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনতে হবে। পরিবহন সেক্টরে যাত্রীস্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি ফোরামে যাত্রী প্রতিনিধি তথা ভুক্তভোগীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আইনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সারাদেশে সাইক্লিস্ট ও পথচারীদের জন্য পৃথক লেন ও নিরাপদ ফুটপাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সভায় উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।

 

 

আজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

আজ ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। প্রতিবছর ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হয়। নবম বারের মতো দিবসটি পালন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’।

 

প্রায় তিনদশক আগে এই দিনে বান্দরবানে শুটিংয়ে থাকা স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চন্দনাইশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জাহানারা কাঞ্চন। সেই থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ এই স্লোগান নিয়ে গড়ে তুলেন সামাজিক সংগঠন-নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। নিসচার পক্ষ থেকে প্রতিবছর ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানানো হয়।

 

২০১৭ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি উপলক্ষে সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি নিসচাসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট