চট্টগ্রাম রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

১৬ অক্টোবরের মধ্যে অন্যান্য পয়েন্টেও দোকান সরানোর নির্দেশ

কক্সবাজার সংবাদদাতা

১২ অক্টোবর, ২০২৫ | ৮:০০ অপরাহ্ণ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় গড়ে তোলা অর্ধশতাধিক দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।

 

আজ রোববার (১২ অক্টোবর) সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি থেকে এসব উচ্ছেদ করা হয়েছে।

 

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশে সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় এই অভিযান শুরু হয়েছে।

 

সকাল ১১টা থেকে ৪ ঘণ্টার টানা উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র‍্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের সদস্যরা। উচ্ছেদ কার্যক্রমে একটি এক্সকাভেটরও ব্যবহার করা হয়।

 

এর আগে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অংশীজনদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা অমান্য করায় এই অভিযান চালানো হয়।

 

অভিযানে অংশ নেওয়া ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, কার্ড থাকুক বা না থাকুক, দোকান সরিয়ে ফেলতে হবে—এই নির্দেশনা দেওয়ার পরও মালিকরা তা করেননি। দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা না করায় প্রশাসনের নির্দেশে অন্তত ৫০টির বেশি দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

 

 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, শনিবার রাতের মধ্যে স্থাপনা সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা অমান্য করায় রবিবার এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, আজকের অভিযানে ৫০টির বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বালিয়াড়িতে কোনো স্থাপনা থাকবে না। সুগন্ধায় যেসব দোকান ও স্থাপনা রয়েছে, তা আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে স্ব উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

 

 

তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি তা সরিয়ে না নেওয়া হয়, তাহলে ১৬ অক্টোবরের পর বড়সড় অভিযানের মাধ্যমে তা পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য পয়েন্টে বালিয়াড়ি দখল করে যে সব স্থাপনা করা হয়েছে, তাও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে সরিয়ে নেওয়া হবে।

 

আইনি বাধ্যবাধকতা ও পূর্বের ইতিহাস

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতকে ‘প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা’ (ECA) ঘোষণা করা হয়। সংশ্লিষ্ট আইনে জোয়ার-ভাটার অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ।

 

অভিযোগ রয়েছে,  বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের বদলির কয়েকদিন আগ সুগন্ধা সৈকতে দ্রুতগতিতে নতুন করে টংঘর ও দোকান বসানো হয়। গত এক বছরে সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানীসহ একাধিক সৈকত পয়েন্টে: ২ শতাধিক নতুন দোকানপাট ও অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে উঠেছিল। এছাড়া সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে কার্ডবিহীন প্রায় ৫ শতাধিকের বেশি অবৈধ দোকান রয়েছে। মাঝে মাঝে বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি অভিযান চালিয়ে তার কিছু অংশ উচ্ছেদ করলেও পরের দিন সেসব দোকান-পাট আবারও বিভিন্ন পয়েন্টে বসে। অভিযোগ আছে, বীচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটির বীচ কর্মীরা সেসব দোকান-পাট বসাতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেওয়ায় পুরোদমে কার্ডবিহীন দোকান বসানো থামা যাচ্ছে না।

 

 এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

 

পূর্বকোণ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট