চট্টগ্রাম শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

এবার রেকর্ড মজুত : পড়তি চালের বাজার
ফাইল ছবি

এবার রেকর্ড মজুত : পড়তি চালের বাজার

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৩ অক্টোবর, ২০২৫ | ২:৫১ অপরাহ্ণ

ধানের বড় মৌসুম হচ্ছে বোরো আবাদ। মোট ধানের প্রায় ৫৪ শতাংশই উৎপাদিত হয় বোরো মৌসুমে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় গত বোরো মৌসুমে ভালো ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ, মজুত ও আমদানিও বাড়িয়েছে। বর্তমানে সরকারের মজুত পরিস্থিতি রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।

 

খাদ্য মন্ত্রণালয় ও চাল আমদানিকারকেরা জানান, গত বোরো মৌসুমের পর পরই সরকার চাল আমদানিতে বড় ধরনের শুল্কছাড় ও সিন্ডিকেট ভেঙে আমদানিকারকদের সমহারে সুযোগ দেয়। সরকারের এই কৌশলে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি করা হয়। এছাড়া সরকারি মজুত বৃদ্ধির পর খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির পরিধিও বাড়ানো হয়। গত দুই মাস ধরে সাধারণ মানুষ ও বাজারে প্রচুর চাল আসায় বাজার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

 

চালের বাজার কমানোর পরিকল্পনার বিষয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে বর্তমানে ৫৫ লাখ পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই মানুষগুলো তো বাজারে চাল কিনতে যাবে না। বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর কারণে দামের উপর প্রভাব পড়েছে।’ গত ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এসব কথা বলেছিলেন খাদ্য উপদেষ্টা।

 

চাল আমদানিকারক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, দুই মাস ধরে চালের বাজার পড়তির দিকে রয়েছে। প্রায়শই দাম কমতে থাকায় কেনাবেচায়ও মন্দাভাব চলছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাল হিসেবে পরিচিত মোটা সিদ্ধ ও মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকারও বেশি কমেছে।

 

চাল আমদানিকারক ও চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, ‘চাল আমদানির শুল্ককর ৫২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্ক কমানো ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে চাল আমদানির সুবিধায় দেশে প্রচুর চাল আমদানি করা হয়েছে। এর বড় প্রভাব পড়েছে বাজারে।’

 

তিনি বলেন, আগের সরকার হাতেগোনা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে চাল আমদানি সুযোগ দিত। চালের বাজারও থাকতো তাদের হাতের মুঠোয়। সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় বাজারে বড় প্রভাব পড়েছে।’

 

কর্পোরেট দৌরাত্ম্য: চালের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মনোপলি ব্যবসা করে আসছে দেশের বিভিন্ন কর্পোরেট গ্রুপ। উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে নেয় কর্পোরেট গ্রুপগুলো। মৌসুম শেষে নিজেদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল তারা। দীর্ঘদিনের সেই মনোপলি ব্যবসার দৌরাত্ম্য কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়ে কর্পোরেট গ্রুপ কেজিতে ৫-৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে চাল বিক্রি করে আসছে।

 

চট্টগ্রামে চালের অন্যতম পাইকারি বাজার পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেছেন, ‘সরকারি এলসি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় দেশে প্রচুর পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। সরকারি মজুত রেকর্ড করেছে। একই সঙ্গে কর্পোরেট গ্রুপের দৌরাত্ম্যও ভেঙে গেছে। এসব কারণে চালের বাজারে বড় প্রভাব পড়েছে।’

 

নগরীর চালের বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী ও চাক্তাই বাজারে দেখা যায়, মোটা সিদ্ধ চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২০০০-২১৫০ টাকা। মাসখানেক আগে তা ২৪৫০-২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারত থেকে আমদানি করা নূরজাহান সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০-২৬০০ টাকায়। আগে তা ২৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গুটিস্বর্ণা ২৮০০ টাকা থেকে কমে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট সিদ্ধ ২৯০০ টাকা থেকে কমে ২৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল ৩৮০০ টাকা থেকে কমে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত মার্চ মাসে তা বিক্রি হয়েছিল ৪১-৪২শ টাকায়। নাজিরশাইল ৪০৫০ টাকা থেকে কমে ৩৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মার্চ মাসে তা ৪৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কাটারি আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০০ টাকা দরে। মার্চ মাসে ৪৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ইরি আতপ ২৩০০ টাকা থেকে কমে ২১৫০ টাকা, বেতি আতপ ২৫০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

সরকারের মজুত পরিস্থিতি: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬১ টন। এরমধ্যে চালের মজুত রয়েছে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৭৬৩ টন। গমের মজুত ৬৭,৯০৫ টন, ধান ৯,১৯৩ টন। গত মার্চ মাসে মোট খাদ্যশস্য মজুত ছিল ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৫৩ টন। এরমধ্যে চালের মজুত ছিল ১১ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৫ টন। জানুয়ারিতে চালের মজুত ছিল ৮ লাখ ৭ হাজার ১৭২ টন।

 

মজুত পরিস্থিতির বিষয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার আগে যে পরিমাণ খাদ্য মজুত থাকা উচিত তারচেয়ে বেশি খাদ্য মজুত রেখেই যাব।’

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট