
দেশি মসুর থেকে ছোলা। গরিব মানুষের ভরসার অ্যাংকরও। সব ডালই এখন মানুষকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। এক মাসের ব্যবধানেই দেশি মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ আর ছোলার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। হঠাৎ ডালের দাম বাড়াকে ‘কৌশলী খেলা’ বলছেন ব্যবসায়ীরা।
তাঁদের অভিযোগ, রমজানের সময় নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজারগুলোতে বাড়ে সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারি। এ সময় পণ্যের দাম বাড়ালে তাই পড়তে হয় জরিমানার ফাঁদে। অনেক সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধও করে দেওয়া হয়। সেজন্য রোজা শুরুর বেশ আগেভাগেই ডালের দাম বাড়ানো শুরু হয়েছে। তবে আমদানিকারকেরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায়, দেশেও বেড়েছে। এর সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক নেই।
গতকাল বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেটের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি মসুর (ছোট দানা) ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। যদিও এক মাস আগে এটি কেনা যেতো ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। সে হিসাবে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। তবে আমদানি করা মসুর ডালের (বড় দানা) দাম বাড়েনি; আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১০ টাকায়। এক মাস আগে ছোলার কেজি ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। সেই ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
একইকারণে বেড়ে গেছে ছোলার ডালের দামও; কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। কিছুদিন আগেও অ্যাংকর ডাল মিলতো ৬০-৬৫ টাকায়। সেই ডাল এখন ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। তবে মুগ ডাল তেমন একটা বাড়েনি। প্রতিকেজি কিনতে ক্রেতার লাগছে ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে দেশি মসুর ডালের দাম ২ শতাংশ এবং ছোলার দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ। সাধারণত ডাল-ছোলার চাহিদা বাড়ে রমজানে। সে কারণে তখন দামও বাড়ে। কিন্তু রোজা আসতে আরও প্রায় পাঁচ মাস বাকি। এত আগে দাম বাড়াকে কৌশল হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
বহদ্দারহাটের মুদি ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিন বলেন, এক মাস ধরে সব ধরনের ডালের দামই বাড়ছে। সাধারণত আমরা রোজার সময় দাম বাড়তে দেখি। আমাদের মনে হচ্ছে, রোজার সময় সরকারের নজরদারি বাড়ে। দাম বাড়ালে বিভিন্ন সংস্থা জেল-জরিমানা করে। সেজন্য আগেভাগেই ডালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যাতে রোজা আসতে আসতে সেই দামটা আরও কিছুটা বাড়ালেও সমালোচনায় না পড়েন। একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দুই নম্বর গেটের মুদি দোকানি জাহাঙ্গীর আলমও।
তবে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নেসার উদ্দিন খান বলেছেন, দাম বাড়ছে বিশ্ববাজারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বেশিরভাগ ডাল আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে। এখন ওই দুই দেশে ডালের মৌসুম না। ফলে বিশ্ববাজারে দামও কিছুটা বেশি। সেটির প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। আগামী নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া-কানাডায় ডাল উৎপাদন হবে। তখন আমদানি বাড়লে দামও কমে আসবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে মানুষের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ৪৫ গ্রাম ডালের চাহিদা রয়েছে। সে হিসেবে প্রতিবছর মসুর, অ্যাংকর, ছোলাসহ সব ধরনের ডালের চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে গড়ে উৎপাদন হয় ১০ লাখ টন মতো। বাকি ১৭ লাখ টন ডাল আমদানি করতে হয়। এক সময় সিরিয়া, তুরস্ক ও ভারত থেকে ডাল আমদানি করতেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন সেসব দেশ থেকে ডাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকেই আসে বেশিরভাগ ডাল। সংকট বাড়লে মিয়ানমার থেকেও কিছু ডাল আমদানি করা হয়।
পূর্বকোণ/ইবনুর