
শিরোনাম পড়ে নিশ্চয় চমকে গেলেন? ভাবছেন-নির্বাচন হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু), সেখানে প্রার্থীদের প্রচারণায় কীভাবে নামলেন বিশ্বখ্যাত ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা তরুণদের ‘হৃদয়ের রানী’ পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী হানিয়া আমির! হ্যাঁ নেমেছেন বটে। তবে মাঠে নয়, ফেসবুক প্রচারণায় ভেসে উঠছে এই তারকাদের ছবি-নাম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন পেজ-গ্রুপের পর্দা এখন যেন ফুটবল মাঠ থেকে হলিউড-বলিউড পর্যন্ত এক অভিনব তারকামেলা। ভোটারদের নজর কাড়তে প্রার্থীরা নেমেছেন এমন এক প্রচারণায়, যেখানে প্রচার পোস্টার আর ভিডিওগুলো হয়ে উঠছে রাজনীতি ছাপিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সেসব পেজ আর গ্রুপে ঢুকলেই দেখা যাচ্ছে রোনালদো ছুটছেন বলের পেছনে, কখনো ট্রাম্পের হাত নেড়ে ওঠা ভঙ্গি, আবার কখনো হানিয়া আমিরের হাসিমাখা মুখ। দেশের নাট্যজগতের প্রিয় মুখ মোশাররফ করিমও হাজির হয়েছেন ক্যাম্পাস রাজনীতির এই ভোটযুদ্ধে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর প্রকাশ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রচারণাও। এরপর থেকেই অভিনব আর সৃজনশীল প্রচারণায় একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে প্রার্থীদের মধ্যে। প্রার্থীদের এমন ব্যতিক্রমী প্রচারণা ভোটারদের মধ্যে বেশ সাড়া মেলেছে।
বলকে জালের ঠিকানা দেখিয়ে কিছু দূর দৌড়ে গিয়ে শূন্যে লাফিয়ে শরীর মুচড়ে উল্টো করে মাটিতে নামার সময় আড়াআড়িভাবে হাত দুটি শরীরের দুপাশে নামিয়ে আনেন রোনালদো। ট্রেডমার্ক উদ্যাপনটি বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে ‘সিউ’ নামে। পোস্টারে সেই উদযাপনের একটা ছবি জুড়িয়ে দিয়েছেন জিএস পদে লড়া নূর মোহাম্মদ বাপ্পী। কেন রোনালদোকে প্রচারে টেনে আনা সেটি কি আর বলতে হয়? বাপ্পীর ব্যালট নম্বর যে-৭। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হওয়া পলাশ দে-ও পেয়েছেন ৭ নম্বর ব্যালট। সেই ব্যালট নম্বরটিকে সবার মনে গেঁথে দিতে তিনিও ব্যবহার করেছেন রোনালদোর ছবি।
শাহ আমানত হলে নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচন করছেন আবদুর রহমান। তাঁর ব্যালটও নম্বর ৭। সেটিকে সবার কাছে পরিচিত করতে তিনিও রোনালদোর একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। শুধু এই তিনজন নন, যারাই ৭ নম্বর ব্যালট পেয়েছেন তাদের অনেকের পোস্টারে দেখা গেছে সিআরসেভেনকে।
চাকসুতে সহ দপ্তর পদে নির্বাচন করছেন মো. মোজাম্মেল মাছুম। হানিয়া আমির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোজাম্মেলের হয়ে প্রচার চালিয়েছেন এমন একটা প্রতীকী পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।
গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের শিক্ষার্থী মো. তালিফ হোসাইন। তার ব্যালট নম্বর ১০। সেই নম্বরটিকে ভেটারদের পরিচিত করতে তিনি টেনে এনেছেন দর্শকপ্রিয় মহানগর ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় কিস্তিতে ওসি হারুনের চরিত্রে অভিনয় করা মোশাররফ করিমের সেই বার্তা-‘দুটি কথা মনে রাখবেন’। সেই দুটি কথা হলো, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক এবং ব্যালট নম্বর-১০। একই ¯স্লোগান সামনে এনেছেন-দপ্তরে নির্বাচন করা মো. ইসমাইলও।
রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচ জাবি আলোনসোও আছেন প্রচারণায়। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া মো. শাফায়াত হোসেনের ব্যালট নম্বর (১৪) যে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় গায়ে জড়াতেন আলোনসো।
আলোচনায় এসেছে ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী সারাহ চৌধুরীর ‘হ্যারি পটার’ পোস্টারও। তিনি তাঁর পোস্টারে হ্যারি পটার সিরিজের বিখ্যাত চরিত্র পেঁচাটিকে নিজের বাম হাতের ওপর জুড়িয়ে দিয়ে বানিয়েছেন পোস্টার।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি নির্বাচনের প্রচারে নিয়ে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ বিলুপ্তির নির্বাহী আদেশে সই করার পর গণমাধ্যকে সেটি হাত উচিয়ে দেখিয়েছিলেন তিনি। সেই ছবিকে সংস্কার করে নিজের পোস্টার জুড়িয়ে দিয়েছেন সাইফুল। একইভাবে ট্রাম্পকে ব্যবহার করেছেন দপ্তর সম্পাদক পদের প্রার্থী ইউনুছ মিয়াও।
সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী ইমাম হাসান এবং সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়া মো. মোজাম্মেল হক হৃদয় হাজির করেছেন অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে সংবাদ উপস্থাপনা করে আলোচিত-সমালোচিত ওপার বাংলার সাংবাদিক ময়ুক রঞ্জন ঘোষকে।
মিলছে সাড়া: বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, দেশের জাতীয় থেকে আঞ্চলিক নির্বাচনে গতানুগতিক প্রচারণা দেখতে দেখতে আমরা সবাই ক্লান্ত। সেখানে ছাত্রসংসদ নির্বাচনগুলোতে প্রচারণা দেখছি একেবারেই নতুন। তরুণদের ভাবনার এই নতুন দিগন্ত সবখানে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমাদের বিশ্বাস।
কথা হয় অভিনব প্রচারণা চালানো প্রার্থীদের সঙ্গেও। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনে ভোটার ২৭ হাজার ৫২১ জন। এত এত ভোটারের কাছে যাওয়া অসম্ভব। আর ভোটারদেরও এত প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর মনে রাখা কঠিন। সেজন্য তাঁরা ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন অভিনব কিছু করতে চেয়েছেন। সেজন্যই এমন পোস্টার-ভিডিও বানানো। এই বিষয়গুলো ভোটাররা ভালোভাবে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এখন দেখার বিষয় ফেসবুকের তারকা-ঝলমলে প্রচারণা কি ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হবে। সেটির উত্তর মিলবে ১৫ অক্টোবর, ওই দিন যে বহু কাঙ্খিত চাকসু নির্বাচন।
পূর্বকোণ/ইবনুর