
ভারতে লাদাখকে আলাদা রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতাভুক্ত করে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে বুধবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
এক পর্যায়ে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে আরও অনেকে।
বুধবার সকালেই পুলিশের সঙ্গে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় লাদাখের লেহ শহরের পরিস্থিতি। লেহ-এর রাস্তায় শত শত বিক্ষোভকারী নেমে আসে এদিন।
বিক্ষোভকারীরা লেহতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দলীয় কার্যালয় ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে, লাটিচার্জ করে। সংঘর্ষে ঘটে প্রাণহানি।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে এর আগে অনশন ধর্মঘট করে বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি লাদাখে সম্পূর্ণ বনধেরও ডাক দেওয়া হয়। এমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ থেকেই পরিস্থিতি পরে সহিংসতায় মোড় নেয়। সাম্প্রতিক সময়ে লাদাখে এমন সহিংসতা এই প্রথম ঘটল।
ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে লাদাখের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ৬ অক্টোবরে। তার আগেই এভাবে আগুন জ্বলল লাদাখে।
লাদাখকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনের অন্যতম মুখ পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুক। গত ২ সপ্তাহ ধরে ওয়াংচুক অনশনে আছেন। তার দাবি লাদাখকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্গত করতে হবে।
ভারতের কেন্দ্র সরকারের শাসনের বিরুদ্ধে গত তিনবছর ধরেই অসন্তোষ বাড়ছে লাদাখে। ২০১৯ সালে ৫ অগাস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল পাশ করা হয়। এর মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়েছিল।
জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল করা হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরকে শিগগিরই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্ত তাতে দেরি হচ্ছে দাবি করে নতুন করে অনশন শুরু করেন সোনাম ওয়াংচুক।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলেও জম্মু ও কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওদিকে, লাদাখে কোনও বিধানসভা নেই। এ নিয়ে লাদাখের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
লাদাখকে একটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার শুরুতে ওয়াংচুক সহ অনেকেই এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের অধীনে রাজনৈতিক শূন্যতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে।
এই অসন্তোষের ফলে বড় ধরনের বিক্ষোভ এবং অনশন শুরু হয়। প্রথমবারের মতো বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ লেহ এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কার্গিলের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম: লেহ অ্যাপেক্স বডি এবং কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স- এর অধীনে হাত মেলায়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কেন্দ্র সরকার লাদাখের দাবি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। তবে, পরপর আলোচনার কোনও সাফল্য মেলেনি।
গত মার্চ মাসে লাদাখের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু আলোচনা দ্রুতই ভেঙে যায়। স্থানীয় নেতারা দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের মূল দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন স্থানীয় নেতা এনডিটিভি-কে বলেছেন, বৈঠক চলাকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন, লাদাখকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ভাগ করে তিনি ভুল করেছেন। তিনি রাজ্যের মর্যাদা এবং ষষ্ঠ তফসিল সংক্রান্ত আমাদের দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বুধবার লাদাখে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল লেহ অ্যাপেক্স বডি’র যুব শাখা। এ শাখার চেয়ারম্যান থুপস্তান সোয়াং বলেন, ‘‘লাদাখে মূলত চারটি দাবিতে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছি।
“কিছু ঘটনা ঘটেছে, যার কারণ বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। এতে আমাদের কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা লাদাখের মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই, মৃতদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।” ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলন করবেন বলেও জানান সোয়াং।
পূর্বকোণ/ পারভেজ