চট্টগ্রাম রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

সাতকানিয়ার মলিন বড়ুয়ার বৃক্ষপ্রেম
রেললাইনের ধারে নিজের লাগানো গাছ পরিচর্যা করছেন বৃক্ষপ্রেমী মলিন বড়ুয়া

সাতকানিয়ার মলিন বড়ুয়ার বৃক্ষপ্রেম

ইকবাল মুন্না, সাতকানিয়া

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ

রেললাইনের দুই পাশে কোথাও তালের বীজ, আবার কোথাও লাগানো হয়েছে খেজুরের চারা। কারো অনুদান নয়। নিজের অর্থায়নে স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজটি করে যাচ্ছেন সাতকানিয়ার বড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা মলিন কান্তি বড়ুয়া। মলিন বড়ুয়া বিগত তিন বছরে ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়া অংশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বীজ লাগিয়েছেন। দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া রেল স্টেশন পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার রেললাইনের দু’পাশে চারা লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন মলিন।

 

গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ার তেমুহনী থেকে ঢেমশা গ্রাম পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে বেড়ে উঠেছে তাল ও খেজুরের চারা। তিন বছর আগে মাটির নিচে পুঁতে রাখা বীজ থেকে গাছগুলো ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, রেললাইন স্থাপনের পর বিগত তিন বছর ধরে লাইনের দু’পাশে তালের বীজ ও খেজুরের চারা লাগানোর কাজ শুরু করে মলিন বড়ুয়া। প্রতিদিন ভোরে হাতে কোদাল আর পানির কলসি নিয়ে রেললাইনের দু’পাশে বীজ লাগানোর কাজ করেন তিনি। রেললাইনের পাশের ফাঁকা জায়গায় কোথাও লাগিয়েছেন তাল, খেজুর। মাঝে মাঝে লাগানো হয়েছে ফলজ ও বনজ গাছের চারা। শুধু রোপণ নয়, নিয়মিত পানি দেওয়া, পরিচর্যাও করেন তিনি।

 

সত্তোরোর্ধ মলিন বড়ুয়া ১৯৮৮ সালে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৩ মৈত্রী সংঘ দিয়ে একটি পাঠাগার স্থাপন করেছিলেন। সাংবাদিকতা করেছে দীর্ঘটা সময়। জীবনের শেষটা সময়ে এসে সাতকানিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগাচ্ছেন তাল গাছ, গাছের বীজ, খেজুর গাছ ও বীজ। সাড়ে পাঁচ হাজার গাছ ইতিমধ্যে লাগানো হয়েছে।

 

স্থানীয় লোকজন জানান, মলিন বড়ুয়ার এ প্রচেষ্টায় রেললাইনের দু’পাশে শিগগিরই তৈরি হবে সবুজের ছায়াঘেরা পরিবেশ। এতে গ্রীষ্মকালে যাত্রীদের স্বস্তি মিলবে, পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে।

 

মলিন বড়ুয়া জানান, রেললাইন যখন স্থাপন করা হয় তখন দু’পাশে ধূ ধূ মরুভূমির মতো লাগছিল। পরে ঝোপঝাড়ে ভরে যায়। চিন্তা করলাম খালি জায়গাগুলোতে তাল গাছ লাগানো হলে একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন বাড়বে, অন্যদিকে বজ্রপাত প্রতিরোধেও কাজ করবে এ গাছ। তালের এ বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে সাতক্ষীরা এলাকা থেকে। গাছ লাগানো মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ রেখে যাওয়া। সবাই যদি সামর্থ্য অনুযায়ী গাছ লাগায়, তবে আমাদের দেশ আরও সবুজ হবে। আমি চাই সমাজের প্রতিটি মানুষ গাছকে ভালোবাসুক।

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস এর প্রাক্তন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দীন বলেন, মলিন বডুয়ার রেললাইনের পাশে গাছ লাগানো একটি দূরদর্শী উদ্যোগ। রেললাইনের দুই পাশে গাছ লাগানো পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি ভূমিক্ষয় রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে একদিকে শব্দ ও ধুলা দূষণ কমবে, অন্যদিকে আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই বৃক্ষরাজি স্থানীয় মানুষের জন্য অক্সিজেনের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের উদ্যোগে স্থানীয় জনগণকে যুক্ত করা গেলে তা রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে গাছগুলো ফল, কাঠ ও ছায়া দিয়ে আর্থিক সুবিধাও এনে দেবে। সরকার যদি নিয়মিত তদারকি করে, তবে এটি একটি সফল প্রকল্পে পরিণত হতে পারে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট