
আসন্ন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা দেওয়ার পরেও ঠিক ‘কী ঘটেছিল?’ যে শেষ মুহূর্তে তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হয় এমন প্রশ্ন জাগে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
এই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রশাসক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেয় ব্যবসায়ীরা। অভিযোগের প্রেক্ষিতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, কিছু ব্যবসায়ীর হুমকি ও চাপের মুখে চট্টগ্রাম চেম্বারের মেম্বারশিপ সেকশনের কর্মকর্তারা চেম্বার প্রশাসককে না জানিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরে রাত ৯টা পর্যন্ত বেআইনিভাবে সদস্যপদ নাবায়নের অর্থ নিয়ে মানি রিসিপ্ট ইস্যু করেন। যার প্রেক্ষিতেই টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যপদ নবায়ন করে। এই ঘটনা তদন্তের পর অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয় প্রশাসক। তবে শেষ পর্যন্ত এতো জালিয়াতি করেও কেন টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের সদস্যপদ বাতিল হবে না তা জানতে চান ব্যবসায়ীরা।
এমনকি এসব সংগঠনের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম চেম্বারকে আবারও এম এ লতিফের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এন্ড বিজনেসম্যান ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের (আইবিডব্লিউএফ) নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও শুরু থেকেই সাধারণ ভোটারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম চেম্বারের ভুয়া ভোটার বাতিলের দাবি তুলেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের সময় থেকেই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে দীর্ঘ তদন্ত শেষেও বাতিল হওয়া টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ আবার হুমকি দিয়ে সদস্যপদ নেওয়াকে অশনি সংকেত বলে উল্লেখ করেন।
চিটাগাং চেম্বার নির্বাচনে সদস্যপদ জালিয়াতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২০ আগস্টের নির্দেশে বিতর্কিত টাউন এসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপের সদস্যদের নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ৩১ আগস্ট অফিস সময় শেষে রাত ৯টা পর্যন্ত চেম্বারের মেম্বারশিপ সেকশনের কর্মকর্তারা বহিরাগতদের সহায়তায় বেআইনিভাবে মানি রিসিপ্ট ইস্যু করেন। এ বিষয়ে ১ সেপ্টেম্বর চেম্বার প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই ৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে ওই সদস্যদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে প্রশাসকের কাছে ফরম জমা দেন এস এম নুরুল হক। পরবর্তীতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর চেম্বারের প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩১ আগস্টের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চেম্বার প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী ১৭ সেপ্টেম্বরের জবাবে জানান, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী মহলের চাপ ও হুমকির মুখে প্রশাসকের অনুমতি ছাড়াই টাকা ও কাগজপত্র নিয়েছিলেন। এ ধরনের কাজ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বহির্ভূত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ী মহলের মতে, সুষ্ঠু ও নিরক্ষেপ নির্বাচন নিশ্চিতে বিতর্কিত সদস্যদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পূর্বকোণ/ইবনুর