
নগরীর লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত নির্মিত শহীদ ওয়াসিম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য আগ্রাবাদের ডেবারপাড় এলাকায় একটি র্যাম্প করতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে ২১ দশমিক ৭৭ শতক জায়গা ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হয়। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই জায়গা বুঝে না পাওয়ায় র্যাম্পটির নির্মাণকাজ শুরু করতে পারছে না সিডিএ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করা হয়। তবে মূল অংশে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু হয় গতবছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে। আনুষ্ঠানিকভাবে টোল পরিশোধের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল করছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে। তবে ১০টি র্যাম্প চালুর কথা থাকলেও সেগুলো না হওয়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবহার বাড়ছে না। প্রত্যাশিত টোলও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে র্যাম্প নির্মাণকাজ দ্রæততার সঙ্গে এগিয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করে সিডিএ।
১০টি র্যাম্প হচ্ছে যেখানে: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র্যাম্প নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে গতবছরের ৫ আগস্টের পর ৫টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়। ১০টির মধ্যে নিমতলা মোড়ে ওঠানামার দুটি র্যাম্প, টাইগারপাসে আমবাগানমুখী নামার একটি র্যাম্প এবং ফকিরহাটে নামার একটি র্যাম্পের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এ চারটি র্যাম্পের কাজ শেষ হলেও এসব র্যাম্পে যান চলাচল শুরু হয়নি।
আগ্রাবাদ ডেবারপাড়ে পতেঙ্গামুখী ওঠার র্যাম্প ও জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে নামার র্যাম্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। জিইসি মোড়ে ওঠার র্যাম্পের নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের সামনে ওঠানামার দুটি র্যাম্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে ওঠার র্যাম্পের কাজ ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ১০টি র্যাম্পের মধ্যে ৪টির কাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে রেলওয়ে থেকে জায়গা না পাওয়ায় আগ্রাবাদ ডেবারপাড়ের র্যাম্পের কাজ এখনও শুরু করতে পারিনি। আর আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সামনে পতেঙ্গা থেকে এসে নামার র্যাম্পটি অর্থ থাকা সাপেক্ষে সবশেষে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া বাকি র্যাম্পগুলোর কাজও চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, র্যাম্পের মোট কাজের অগ্রগতি হচ্ছে প্রায় ৬০ শতাংশ। যেগুলোর কাজ চলমান রয়েছে, আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেসব র্যাম্পের কাজও শেষ হবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, আমরা বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। রেলওয়ে থেকে ভূমি পেলে আমরা ডেবারপাড়ে র্যাম্পের নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করতে পারবো।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবউল করিম পূর্বকোণকে জানান, র্যাম্পের জন্য রেলওয়ের জমি লিজ দেওয়ার বিষয়ে বিভাগীয় রেলভূমি বরাদ্দ কমিটি ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ থেকেও ইতিবাচক মতামত এসেছে। এখন আমরা এই মতামত শীঘ্রই রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা।
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সংশোধিত প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদিত হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজই শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পরে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।
পূর্বকোণ/ইবনুর