
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৫ বছর পর চালু হলো পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি। দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের জীবাণু শনাক্তকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার জন্য বেসরকারি ল্যাবের ওপর নির্ভর করতে হতো। এতে যেমন সময় বেশি লাগত, তেমনি খরচ হতো কয়েকগুণ বেশি। নতুন ল্যাবরেটরি চালুর কারণে স্বল্প খরচে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে এসব পরীক্ষা করাতে পারবেন। চিকিৎসকরা বলছেন, এটি শুধু রোগীদের অর্থ সাশ্রয়ই করবে না, বরং সংক্রমণজনিত রোগ নির্ণয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে মাত্র ১২০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সময়ের সঙ্গে শয্যা সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে চিকিৎসাসেবার পরিধি। তবে এতদিন এ হাসপাতালে জীবাণু শনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সুযোগ ছিল না। কলেজের ল্যাব থাকলেও তা মূলত শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য ব্যবহার হয়। তবে ওই ল্যাবে রোগীদের পরীক্ষার কিছু সুযোগ থাকলেও সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে রোগীরা প্রায়শই বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হতেন। এতে সময় ও অর্থ দুইই বেশি লাগত। নতুন ল্যাব চালুর ফলে লাভবান হবেন রোগীরা।
ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন ল্যাবে প্রথমে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালু হয়েছে। একটি রক্তে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক শনাক্তের জন্য রক্ত কালচার ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা (ব্লাড সি/এস) এবং অন্যটি প্রস্রাব কালচার এবং সংবেদনশীলতা পরীক্ষা (ইউরিন সি/এস)। এরমধ্যে ব্লাড সি/এস বেসরকারি ল্যাবে দেড় হাজার থেকে ১৮শ’ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এ পরীক্ষা চমেক হাসপাতালে করা যাবে মাত্র ৩০০ টাকায়। আর ইউরিন সি/এস বেসরকারি ল্যাবে করতে খরচ হয় ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকা পর্যন্ত। এ পরীক্ষা চমেক হাসপাতালে করা যাবে ২০০ টাকায়।
চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া রাজু বলেন, এতদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা এসব পরীক্ষা করাতো বাইরে যেতো। যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ছিল। এখন স্বল্পমূল্যে এখানে করা যাবে। যা রোগীদের জন্য বড় স্বস্তির।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঢাকার বাইরে কোনো সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের পূর্ণাঙ্গ মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরি নেই। চট্টগ্রামের অন্য সরকারি হাসপাতালেও এ সুবিধা নেই। যে কারণে রোগীদের বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করতে হয়।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর নতুন এই ল্যাবরেটরির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তী, ডা. রুমা ভট্টাচার্য, সিনিয়র স্টোর কিপার ডা. এস এম আসাদুল্লাহ, সিনিয়র ক্রিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. শাহীন আক্তার চৌধুরীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ল্যাব চালুর পর প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন রোগীর পরীক্ষা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম বাড়ালে বেশি সংখ্যাক পরীক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব চালুর মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ে হাসপাতালের সক্ষমতা এক ধাপ এগিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো- সাধারণ মানুষ যেন বেসরকারি খরচের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে সরকারি হাসপাতালে আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা পান। ভবিষ্যতে এখানে আরও পরীক্ষা যুক্ত করা হবে। ল্যাবকে আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংক্রমণজনিত রোগ নির্ণয়ে দ্রুত ও নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ল্যাবরেটরি চালুর ফলে চিকিৎসকরা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
ল্যাবের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ক্রিনিক্যাল প্যাথলজি ডা. শাহীন আকতার চৌধুরী বলেন, এতদিন রোগীদের জীবাণু শনাক্তকরণের পরীক্ষা করতে বেসরকারি ল্যাবে যেতে হতো। নতুন ল্যাবের মাধ্যমে আমরা দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পরীক্ষা করতে পারব। এতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। রোগীদের চিকিৎসা আরও কার্যকর হবে।
পূর্বকোণ/ইবনুর