
বয়স ১০ বছর। থাকে টঙ্গী রেল স্টেশন এলাকায়। মাঝে-মধ্যে ওঠে পড়ে ট্রেনে। চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্টেশনে। এবার শখ জাগে পর্যটননগরী কক্সবাজারে যাওয়ার। পরিবারের অজান্তে টঙ্গী থেকে ওঠে পড়ে ট্রেনের ছাদে। চলে আসে চট্টগ্রামে। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। ৮ সেপ্টেম্বর ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে জ্ঞান হারায় শিশুটি। মারাত্মক আঘাত পায়। ভেঙে যায় মাথার হাড়। অজ্ঞাতনামা হিসেবে ঠাঁই হয় চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে। সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের নিবিড় পরিচর্যায় সুস্থ হয়ে ওঠে। ফেসবুকে ছবি দেখে হাসপাতালে ছুটে আসেন শিশুটির মা। চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের কল্যাণে খুঁজে পেলেন নিখোঁজ সন্তানকে।
শিশুটির মা নাজমা আকতার জানান, সোমবার বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তার নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি দেখতে পান, ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ছেলের খোঁজ পেয়ে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ভর্তি রয়েছে তার ছেলে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার শিশুটির জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে শিশুটির পরিবারের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখে ছুটে আসেন নাজমা। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন ছেলে আবদুল্লাহকে দেখেন। সেখানে কথা ছেলে আবদুল্লাহর সঙ্গে।
তিনি জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। তিনি বলেন, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে ঘুরেছি।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চমেক হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ