
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চ বলা হয়ে থাকে এই ছাত্রসংসদকে। সেই মঞ্চের প্রধান দুটি পদ-সহসভাপতি (ভিপি) আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ের মুকুট পড়েছে চট্টগ্রামের দুই তরুণের মাথায়। শুধু কি ভিপি-জিএস; পদাধিকার বলে সভাপতির আসনে বসবেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, তিনিও আবার চট্টগ্রামের সন্তান।
চট্টগ্রামের বিজয়ের মিছিল এখানেই থেমে থাকেনি। সম্পাদকীয় আর সদস্য পদের পাঁচটিতেও জয়ী হয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা। হল ছাত্র সংসদগুলো মিলিয়ে এই সংখ্যা আরও বড়।
এটি যেন কেবল তাদের ব্যক্তিগত কোনো অর্জন নয়, বরং তারা যেন বার্তা দিলেন-রাজধানী নির্ভর রাজনীতির সমীকরণেও সমান শক্তি নিয়ে উঠে আসতে পারেন প্রান্তিক এলাকার আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা তরুণ-তরুণীরাও। প্রধান পদগুলোতে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জয়-জয়াকার দেখে তাই অনেকে রসিকতা করছেন ডাকসুতে ‘চট্টগ্রাম সমিতি’!
৭ জনের বাড়ি কোথায়? :
ভিপি পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন আবু সাদিক কায়েম। জুলাই বিপ্লবের আলোড়নে যিনি হয়ে উঠেছিলেন আলোচিত মুখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের এই শিক্ষার্থীর পৈত্রিক নিবাস সাতকানিয়া হলেও বাবার ব্যবসার সূত্রে থিতু হয়েছেন খাগড়াছড়ি শহর এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক এই সভাপতি খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সাদিক শিবিরের দায়িত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বও সামলেছেন।
জিএস পদে বিজয়ী এস এম ফরহাদের গল্পটাও প্রায় একই। তার বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়। তবে সাদিকের পরিবারের মতো পরে তার পরিবারও চলে যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে। ফরহাদ ওই জেলার মাইনী গাথাছড়া বায়তুশ শরফ মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাসের পর চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে আলিম শেষ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি।
এছাড়া ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে জয়ী ফাতেমা তাসনিম জুমার বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালীতে এবং কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে জয়ী উম্মে ছালমা সাতকানিয়ার কন্যা। কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বমিত্র চাকমা ও হেমা চাকমা, আর সাতকানিয়ার রায়হান উদ্দীন। রায়হান ও উম্মে ছালমা আবার দম্পতি, স্বামী-স্ত্রীর যুগল বিজয় হয়েছে বেশ আলোচিত। ডাকসুর কেন্দ্রীয় ২৮টি পদে এবার চট্টগ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক নির্বাচন করেছিলেন। তাদের মধ্যে জিতলেন ৭জন।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা মিলে গড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম, যার ভাষা, সংস্কৃতি আজও আপন আবেগে ভরপুর। চট্টগ্রামের দুজন মানুষ একসঙ্গে হলেই এদের কথোপকথন গড়ায় মাতৃভাষার স্রোতে, সেটা দেশে হোক কিংবা বিদেশে।
পূর্বকোণ/ইবনুর