চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাঁকখালীতে ৩য় মামলা, প্রধান আসামি ছাত্রদল নেতাসহ ১ হাজার
উচ্ছেদের প্রতিবাদে শহরের প্রধান সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ স্থানীয়দের

নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা

বাঁকখালীতে ৩য় মামলা, প্রধান আসামি ছাত্রদল নেতাসহ ১ হাজার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৯:১৪ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও বুলডোজার ভাঙচুরের ঘটনায় তৃতীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

 

রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এতে প্রধান আসামি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিনসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

 

মামলার এজাহারে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিন গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নুনিয়াছড়া ও নতুন বাহারছড়া এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল প্রশাসনের। কিন্তু এর আগেই শহরের প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে শত শত মানুষ ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ও ঠেলাগাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এ সময় উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত বুলডোজার ভাঙচুর করা হয় এবং অভিযানে থাকা কর্মকর্তাদের ওপর হামলার চেষ্টা চালানো হয়।

 

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযানে বাধা এবং হামলার ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২৫০ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করা হয়। পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর অভিযান পণ্ড হওয়ার ঘটনায় দ্বিতীয় মামলায় ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।


আইনি লড়াইয়ে নদীর দখলমুক্তকরণঃ

বাঁকখালী নদী দখলমুক্তকরণ অভিযানটি গত কয়েক বছর ধরেই একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালেই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংস্থাটিকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং নদী তীরের ৭২১ একর জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। তবে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেওয়ায় দখল অব্যাহত থাকে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যৌথ অভিযানে ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন দখলমুক্ত করা হলেও পরে তা পুনরায় দখল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারকে আগামী চার মাসের মধ্যে নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

 

হাইকোর্টের এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের উপস্থিতিতে গত ৩০ আগস্ট একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। প্রথম দুই দিনের অভিযানে অন্তত ৫৬ একর জমি ও চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল।

 

দখলদারদের প্রতিরোধের মুখেও আইনি পথে নদী দখলমুক্ত করার এই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

 

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টের এক রায়ে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখল ও দূষণমুক্তকরণের জন্য সরকারকে চার মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছে, নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে এটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে, নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে তাদের উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমানে বাঁকখালী নদী রক্ষায় অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন।

 

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট