চট্টগ্রাম সোমবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

প্রাণ ফিরছে ‘মরা চাক্তাইয়ের’
জলাবদ্ধতা নিরসনে বহহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের মুখে প্রশস্ত করা হচ্ছে চাক্তাই খাল। ছবি: শরীফ চৌধুরী

কমবে বহদ্দারহাট এলাকার জলাবদ্ধতা

প্রাণ ফিরছে ‘মরা চাক্তাইয়ের’

ইমরান বিন ছবুর

২৪ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

এক সময় আকাশে মেঘ দেখলে ভয় পাওয়া শুরু হয়ে যেত নগরীর বহদ্দারহাটের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের। কেননা এক পশলা বৃষ্টি হলেই ডুবে যেত পুরো এলাকা। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই ভোগান্তি নিয়ে বর্ষাকাল পার করতে হতো তাদের। দীর্ঘদিনের সেই ভোগান্তি অবশেষে নিরসন হতে শুরু করেছে। বহদ্দারহাটে দখলে প্রায় ‘মরে যাওয়া’ চাক্তাই খালের প্রাণ ফিরছে।

জানা যায়, চাক্তাই এলাকা থেকে শুরু হওয়া চাক্তাই খাল নগরের বিভিন্ন পথ ঘুরে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সের নিচ দিয়ে এসে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে এসে আটকে যায়। তাই এ অংশকে ‘মরা চাক্তাই’ বলা হয়।

বহদ্দারহাট ও আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ছিল অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। এমনকি খাল ও ড্রেনের ওপরে অতীতের মেয়ররা নির্মাণ করেছিলেন মার্কেট। দখলের কারণে চাক্তাই খাল সরু হতে হতে এক পর্যায়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খালের ওপরের অবৈধ স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে খালটিও ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। বহদ্দারহাট খতিবের হাট হয়ে আসা মির্জাখালটি কাঁচাবাজারের আগে চাক্তাই খালের সঙ্গে মিশছে। কাঁচাবাজার এলাকার পানি এখন পুলিশ বক্স হয়ে চাক্তাইখালে যাবে। অন্যদিকে ডোমখালী খালেও যাবে। ফলে এখন পানি প্রবাহে বাধা থাকছে না।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আগের মেয়র খালের জায়গায় দখল করে সেখানে চসিকের ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। সম্প্রতি আমরা ভবনটি ভেঙে দিয়েছি। এছাড়াও চসিকের নির্মাণাধীন আরেকটি ভবনের কিছু অংশ ভেঙে দিয়েছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ভোগান্তি কমাতে সব ধরনের কাজ করছি।

জানতে চাইলে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মৃত প্রায় খালটিকে উদ্ধারে কাজ করছি। কাঁচাবাজার অংশে চাক্তাই খালের পানি যাওয়ার পথ ছিল না। বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় খালটি বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে চসিকের মার্কেট ভেঙে খালটি প্রশস্ত করার কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, ওই অংশে চাক্তাই খালের পানি মির্জা খালে যাওয়ার কথা। কিন্তু দখলের কারণে চাক্তাই খাল এখানে এসে বিলীন হয়ে যায়। আমরা এখন চাক্তাই খালের ওই অংশকে পুনরুদ্ধার করে মির্জা খালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ করছি। প্রায় দুইশ মিটারের মত সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া নতুন আরডিপিপি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ব্যয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা এবং সময় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৫ শতাংশ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট