চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার : আলোর মুখ দেখলো না একটিও
নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী রাণী রাসমনি ঘাট এলাকা

ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার : আলোর মুখ দেখলো না একটিও

মোহাম্মদ আলী

১৮ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয় প্রায় ৭ লাখ মেট্রিকটন। আহরিত এসব সামুদ্রিক মৎস্য দেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার ৭৫ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে খালাস করা হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মাছ বিপণনের জন্য ফিশিংবোট ও ট্রলার থেকে খালাস করা হয় চট্টগ্রামে। অথচ চট্টগ্রামে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়নি আধুনিক কোন ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার।

 

নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় বেসরকারিভাবে একটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার থাকলেও সেটি আধুনিক নয়। এটিতে নেই পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। এ অবস্থায় সরকার একটি সামুদ্রিক মৎস্য প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে চারটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় একটিও নির্মাণ করা হয়নি।

 

সামুদ্রিক মৎস্যখাতে উন্নয়নের জন্য সরকার দেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার ৭৫ উপজেলায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ নামে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। একই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ১৮টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার ও ফিশ হারবার নির্মাণের অনুমোদন ছিল।

 

এর মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য অনুমোদন ছিল ৪টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের। এগুলো নগরীর পতেঙ্গায়, সীতাকুণ্ডের কুমিরায়, বাঁশখালী উপজেলায় ও দক্ষিণ কাট্টলীর রানী রাসমনি ঘাট এলাকায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ভূমি সংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে একটিও ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণ হয়নি।

 

তবে প্রকল্পের অধীনে মিরসরাইয়ে একটি ফিশ ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও নগরীর পতেঙ্গায় একটি ফিশ কোয়ারেন্টাইন ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর ওপারে ইছানগরে বিএফডিসি এলাকায় একটি ছয়তলার মৎস্যভবন, একটি আধুনিক অকশন সেট ও বরফকল নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে আহরিত সামুদ্রিক মৎস্য অকশন দেওয়ার সুযোগ হবে।

 

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরূপণ, আহরণ, বিপণন, নিয়ন্ত্রণ, নজরদারিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণা, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য আহরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য সেখান থেকে ৬০০ কোটি টাকা কাটছাঁট হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রতিবছর মৎস্য উৎপাদন হয় প্রায় ৪৭ লাখ মেট্রিকটন। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ সামুদ্রিক মৎস্য ধরা হলে তাতে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয় প্রায় ৭ লাখ ৫ হাজার মেট্রিকটন। এসব সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয় প্রায় ৬০ হাজার ফিশিংবোট ও ২৫০টি ট্রলারের মাধ্যমে। কিন্তু আহরণ ও নিয়ন্ত্রণের কোন তথ্য না থাকায় নানা সমস্যা ছাড়াও সরকার প্রতিবছর বিপুল পরিমাণের রাজস্ব হারায়। তাই এ খাতে উন্নয়নের জন্য সরকার দেশের ১৬টি উপকূলীয় জেলার ৭৫ উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

 

সামুদ্রিক মৎস্যের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী রানী রাসমনি ঘাট এলাকার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সরকারি জায়গা। সেখানে প্রতিদিন সাগর থেকে আহরিত প্রচুর পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ ফিশিংবোট থেকে খালাস করা হয়। কিন্তু সেখানে কোন ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার না থাকায় খালাসের সময় প্রচুর মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া সেখানে নেই কোন বরফকল। তাতে অনেকটা পচে যায় মাছ। এ অবস্থায় সেখানে প্রকল্প থেকে একটি ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ থাকলেও কার্যত সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

 

মেরিন হোয়াইট ফিশ ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মো. ছালেহ জহুর দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য ফিশিংবোট থেকে খালাস, সংরক্ষণ, বিপণন ও পরিবহনের জন্য দরকার আধুনিক ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার। সারাদেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার মধ্যে আহরিত বেশি সামুদ্রিক মাছ খালাস হয় চট্টগ্রামে। অথচ চট্টগ্রামে একটিও ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার নির্মাণ না হওয়া দুঃখজনক।

 

জানতে চাইলে উপ-প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন, গবেষণা, মনিটরিংসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিশাল এ প্রকল্প গ্রহণ করে। এটি বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দেশের উপকূলীয় ১৬টি জেলার ৭৫ উপজেলার ৭৫০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটির কাজ চলতি বছরের নভেম্বরে শেষ হবে। কিন্তু প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে চারটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত থাকলেও ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে একটিও তৈরি হচ্ছে না।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট