চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

দুই কারণে কমছে সিমেন্ট রপ্তানি
ছবি: সংগৃহীত

দুই কারণে কমছে সিমেন্ট রপ্তানি

মোহাম্মদ আলী

১৬ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দুই সমস্যার কারণে কমে গেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সিমেন্ট রপ্তানি। মূলত আমদানি-রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে জটিলতা ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।

 

রপ্তানিকারকরা জানান, ২০০২ সালের দিকে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য ত্রিপুরাসহ কয়েকটি রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সিমেন্ট রপ্তানি শুরু হয়। পরে তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কিন্তু সিমেন্ট রপ্তানির জন্য এদেশে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে রপ্তানিকারকদের অনেকটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার প্রতিবছর এসব কাগজ রিনিউ করতে হয়। একইভাবে ভারতের আমদানিকারকরাও এ সমস্যায় পড়েন। এতসব ঝামেলার পরও সিমেন্ট রপ্তানি করে লাভের পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া দফায় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। এ কারণে ভারতে সিমেন্ট রপ্তানি অনেক কমে গেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েক বছর আগেও মাসে প্রায় ১৮ হাজার টন সিমেন্ট রপ্তানি করা হতো। মূলত বাংলাদেশের আটটি সিমেন্ট প্রস্তুততকারক প্রতিষ্ঠান এই রপ্তানির সাথে যুক্ত ছিল। ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসামসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোয় সিমেন্ট রপ্তানি করতো এমআই সিমেন্ট, প্রিমিয়ার, শাহ সিমেন্ট, কাউন্ট, কনফিডেন্স, আলট্রাটেক, সেভেন সার্কেল, হোলসিম, টাইগার, আরামিট, ফ্রেশ সিমেন্টসহ কয়েকটি কোম্পানি। কিন্তু বর্তমানে সিমেন্ট রপ্তানি অর্ধেকের চেয়েও কমে গেছে। বর্তমানে প্রিমিয়ার, শাহ সিমেন্ট, কাউন্টসহ কয়েকটি কোম্পানি সিমেন্ট রপ্তানি করে বলে জানা গেছে।

 

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায় দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সিমেন্ট রপ্তানি আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম দুই কারণ হলো- আমদানি-রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে জটিলতা ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। আমার জানামতে, বর্তমানে প্রিমিয়ার, শাহ সিমেন্ট, কাউন্ট সিমেন্ট কোম্পানি ভারতে কিছু পরিমাণে সিমেন্ট রপ্তানি করে থাকে।

 

জানতে চাইলে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক সরোয়ার আলম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, বাংলাদেশে সর্বমোট ৪২টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিমাসে প্রায় ৮৪ লাখ মেট্রিকটন। কিন্তু প্রতিমাসে গড়ে বিক্রি হয় হয় ৩২ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিকটন। এর মধ্যে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও কিছু পরিমাণে সিমেন্ট রপ্তানি হয়। কিন্তু আমদানি-রপ্তানিতে প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহে ভোগান্তি ও জ্বালানি তেলের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যায় পরিবহন খরচ। তাতে লাভ কম হওয়ায় অনেকে সিমেন্ট রপ্তানিতে আগ্রহ দেখায় না।

 

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, সাধারণত দেশের সিমেন্টের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যক্তি পর্যায়ে এবং বাকি ৪০ শতাংশ সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোয় ব্যবহার করা হয়। তবে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, অর্থনৈতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি ও সরকারি প্রকল্পের কাজ তুলনামূলক কম হওয়ায় দেশে সিমেন্ট বিক্রি কমে গেছে। সরকারি প্রকল্পে সিমেন্ট ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এখন ব্যক্তি পর্যায়ে সিমেন্টের ব্যবহার ৯০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে সিমেন্ট রপ্তানিকারকেরা।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট