চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

ক্রেতার প্রশ্ন : ‘বাজার কি হয়ে যাচ্ছে রাজার’
ফাইল ছবি

ক্রেতার প্রশ্ন : ‘বাজার কি হয়ে যাচ্ছে রাজার’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার। টাটকা মাছের গন্ধ, মসলার ঝাঁজ আর সবজির সবুজ রঙে ভরে আছে চারপাশ। ভিড়ের ভেতর ধাক্কা সামলে এগোচ্ছেন ক্রেতারা। কিন্তু তাদের মুখে হাসি নেই, আছে হতাশার ছাপ-কারণ বাজার এখন সাধারণ মানুষের জন্য নয়, যেন রাজার জন্যই সাজানো!

 

‘ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে, দামও কম’-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন প্রচারণা দেখে বড় আশা নিয়ে জাতীয় মাছ কিনতে এই বাজারে এসেছিলেন শামীম আহমেদ। ইলিশ বড়, মাঝারি ও ছোট-তিন ভাগে ভাগ করে বিক্রি করছিলেন বিক্রেতারা। শামীম ছোট আকারের একটি ইলিশ হাতে নিয়ে দাম জানতে চাইলেন। দোকানি উত্তর দিলেন-‘মামা কেজি একদাম ১৩০০ টাকা।’ দাম শুনে থমকে দাঁড়ালেন শামীম। একরাশ আক্ষেপ নিয়ে এই ক্ষুদে ব্যবসায়ী বললেন, ‘ফেসবুকের সবই ফাঁকা বুলি। না বেশি ধরা পড়ার পরও ইলিশের দাম কমাচ্ছে না।’

 

বাকি দুই আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল কেজি প্রতি ১৯০০ থেকে ২৩০০টাকা পর্যন্ত। ইলিশের আশা ছেড়ে দিয়ে শামীম এগোলেন মিঠা পানির মাছ যেদিকে বিক্রি হচ্ছে সেদিকে। একটা তরতাজা কাতাল মাছ পছন্দ হলো। জীবন্ত সেই মাছটির দাম জানতে চাইলে উত্তর আসে- ‘কেজি একদাম ৪৫০টাকা। এক টাকাও কম হবে না।’ প্রায় দুই কেজি ওজনের সেই মাছটি কেনার সাহস হলো না শামীমের। শেষমেশ ২৫০ টাকা দামের ছোট আকারের পোয়া মাছ কিনে ফিরলেন এই তরুণ।

 

মুরগি-ডিমের দোকানের দৃশ্য আরও ভয়াবহ! সেই যে পবিত্র আশুরায় দাম বেড়েছিল আর কমার কোনো লক্ষণ নেই। ব্রয়লার এখনো ১৫০-১৬০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝখান দিয়ে ডিমের দামও এক লাফে প্রায় ২০টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।

 

সবজির দোকানগুলোতেও দাম যেন প্রতিদিন নতুন রেকর্ড গড়ছে। ৬০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। টমেটো-মরিচ তো দেড়শ টাকার নিচে নামছেই না।

 

দাম বাড়ার সমস্যার মধ্যে নতুন সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছে পেঁয়াজ। এক সপ্তাহ আগেও ৬০-৭০ টাকায় পেঁয়াজ মিলতো বাজারে। সেটি ক্রমেই বাড়তে বাড়তে এখন ৯০ টাকায় এসে থেমেছে। আদার দামও বাড়তি, ২২০-২৪০ টাকা পর্যন্ত। রসুনের দাম কিছুটা কম আছে, ১২০-১৪০ টাকায় মিলছে অবশ্য।

 

সবকিছুর দামে ঊর্ধ্বগতি দেখে কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে বাজার করতে আসা গৃহিণী সাহেনা আক্তার প্রশ্ন ছুঁড়লেন, ‘বাজার কি ক্রমেই রাজার জন্য হয়ে যাচ্ছে?’ প্রশ্নটা হয়তো এখনিই অমূলক। তবে যেভাবে সবকিছুর দাম ক্রমেই বেড়ে চলছে, সামনের দিনগুলোতে মধ্য ও নিম্নবিত্তের কাঁছাবাজারে যাওয়া হয়তো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে!

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট