চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ইসরায়েলের ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ : নিপীড়নের ওপর দাঁড়ানো এক দানবীয় শিল্পব্যবস্থা

আবসার মাহফুজ

১২ আগস্ট, ২০২৫ | ১:৩২ অপরাহ্ণ

দ্বিতীয় পর্ব। জাতিসংঘের ১২টিরও বেশি সংস্থা ও সরকার সম্প্রতি একটি গোপন নথি তৈরি করেছে। যেখানে ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে গাজায় ক্ষুধার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ৩৫ জন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞকে বিশেষভাবে এই ডেটা পাওয়ার এবং এই প্রতিবেদনটি একত্রিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া গোপন নথির কিছু বিষয় প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা এএফপি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমগ্র গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের একটি উচ্চ এবং টেকসই ঝুঁকি রয়ে গেছে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯৬ শতাংশ। ২০ লাখ মানুষ উচ্চমাত্রার তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন। গাজার চার লাখ ৯৫ হাজার মানুষ ক্ষুধার বিপর্যয়মূলক মাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে। দুর্ভিক্ষের ঠিক আগে এটাই সর্বোচ্চ স্তর। গাজার বিশ শতাংশ ফিলিস্তিনি না খেয়ে সারা দিন রাত কাটায়। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য আবর্জনা থেকে খাবার সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ট্রাকে করে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে’র তথ্য (আইপিসি) অনুসারে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এর মধ্যে গাজা উপত্যকার প্রায় সবাই ক্ষুধায় আক্রান্ত। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে এক শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে।

 

গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর শিশুরা নিখোঁজও হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেভ দ্য চিলড্রেন গাজার নিখোঁজ শিশুদের বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানায়। তারা দাবি করে, গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ফলে গত ২ বছরে ২১ হাজার শিশু হারিয়ে গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে, আটক হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে বা গণকবরে চাপা পড়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সর্বশেষ বিবৃতি যা গাজায় শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ তুলে ধরে। এ পর্যন্ত গাজার শিশুদের নিয়ে যেসব বিবৃতি পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো- জাতিসংঘ নভেম্বরে এক বিবৃতিতে গাজাকে শিশুদের কবরস্থান বলে অভিহিত করেছে। ইউনিসেফ মে মাসে বলেছিল, গাজায় শিশুদের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা নেই, সেখানে শিশুদের সর্বোচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে। জুন মাসে ইউনিসেফ বলেছিল, গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে ভুগছে যা তাদের বেঁচে থাকা, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠছে। জুন মাসে জাতিসংঘের প্রধান শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘লজ্জার তালিকায়’ ইসরায়েলকে যুক্ত করে বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা অভূতপূর্বসংখ্যক শিশু নিহত এবং পঙ্গু হওয়ার কারণে হতবাক হয়েছি।’ জুনে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজা এবং পশ্চিম তীরে ৪৩৬০ শিশুর বিরুদ্ধে ৮০০৯টি গুরুতর আইন লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ এনেছে।

 

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপারটি হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর পরিচালিত ইসরায়েলের পরিকল্পিত গণহত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের সরেকার, জায়ান্ট কোম্পানি, এমনকি প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোও এ ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দিচ্ছে। গত ১৬ জুন ২০২৫, সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিং (সিএফএমএম) গাজাযুদ্ধে বিবিসির ভূমিকা নিয়ে গালিচায় চেপে রাখা গোমর ফাঁস করে দিয়েছে! এবারই প্রথম বিবিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা কিন্তু নয়। বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ একাধিক পাশ্চাত্য ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন কলাকৌশলে গাজা নিধনের পক্ষে বয়ান তৈরি করেছে। পাশ্চাত্য সংবাদমাধ্যমের এ ধরনের নিন্দনীয় ভূমিকা কেবল মিডিয়ার চরিত্র উদোম করে তা কিন্তু নয়, বরং এরই মধ্য দিয়ে বিশ্বনেতৃত্ব ও চিন্তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কপটতার খোলসও উন্মোচিত হয়ে পড়ে। অতীতে দেখা গেছে, কীভাবে ঔপনিবেশিক প্রভুরাষ্ট্র পদ্ধতিগতভাবে প্রজারাষ্ট্রগুলোতে লুণ্ঠন ও জাতি নিধনের মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। আধুনিক জমানায় পাশ্চাত্য দেশগুলো এখনও নতুন কায়দায় পুরোনো কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা ইস্যুতে পাশ্চাত্য মিডিয়া যে ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে ঔপনিবেশিত প্রভুরাষ্ট্রের তৎপরতার তুলনা চলে। গাজাযুদ্ধে বিবিসির প্রতিবেদন অনেকটা তাই, যেখানে সংবাদমাধ্যমটি গণহত্যার পক্ষে সম্মতি উৎপাদনে চেষ্টা করেছে। সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিং প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘গাজাযুদ্ধ তুলে ধরতে গিয়ে বিবিসি পদ্ধতিগতভাবে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টের ভূমিকা রেখেছে।’ বিবিসিসহ অপরাপর সংবাদমাধ্যমের এই তৎপরতার লক্ষ্য মূলত ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠী নির্মূলের পক্ষে বিশ্বব্যাপী বয়ান ও সম্মতি উৎপাদন করা। শুধু তাই নয়; এই বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে বিবিসি হাতিয়ার হিসেবে ভাষার রাজনীতিকে ব্যবহার করেছে। এই অভিযোগের সত্যতা কেবল বিবিসির বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে এমন কিন্তু নয়। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর গবেষক ও লেখক গ্রেগরি শুপাক আলজাজিরাতে এ বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। তিনি সেখানে দেখিয়েছেন কীভাবে পাশ্চাত্য মিডিয়াগুলো গণহত্যার পক্ষে বয়ান তৈরি করেই যাচ্ছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে’ বলে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ারও চেষ্টা করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারগুলোও ইসরায়েলের দায়মুক্তির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তারা গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যাকে ‘আত্মরক্ষা’ বলে বৈধতা দিচ্ছে। একইসঙ্গে নানাবিধ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তারা একদিকে মানবাধিকারের কথা বলছে, অন্যদিকে গাজায় নির্মম কায়দায় ইসরায়েল কর্তৃক মানবাধিকারের পদদলনকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে। এবং ইসরায়েলের ‘গণহত্যার অর্থনীতি’তে ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমাদের এই দ্বিচারিতা শুধু নৈতিক অন্ধতা নয়, বরং ইতিহাসবাহী ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তির ফল। যে সভ্যতা দাসব্যবসা, আদিবাসী গণহত্যা, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ, হলোকাস্ট এবং পারমাণবিক হামলার জন্ম দিয়েছে, সেই পশ্চিমা ‘সভ্যতা’ই আজ ইসরায়েলকে অস্ত্র, স্যাটেলাইট গোয়েন্দা তথ্য ও কূটনৈতিক আশ্রয় দিয়ে গাজায় গণহত্যা চারাচ্ছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের ভাষায়, ‘ইসরায়েল আমাদের হয়ে নোংরা কাজটা করে দিচ্ছে।’ এই বক্তব্য ইসরায়েল-পশ্চিম সম্পর্কের বাস্তবতাকে নগ্নভাবে উন্মোচন করেছে।

 

সাম্প্রতিক নানা তথ্য বলছে, ইসরায়েল বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক, একইসঙ্গে ক্রয়কারক দেশ হয়ে উঠেছে। তাদের সামরিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, মিসাইল, নজরদারি সরঞ্জাম ইত্যাদি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি হয় ‘যুদ্ধ-পরীক্ষিত (নধঃঃষব-ঃবংঃবফ)’ তকমা দিয়ে। গাজা, পশ্চিম তীর ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তব প্রয়োগে সফল বলে দাবি করা হচ্ছে। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশ থেকেও অস্ত্র ক্রয় ও বিভিন্ন নতুন অস্ত্রের পরীক্ষা করা হচ্ছে গাজায়। ইসরায়েলের এসব মানবতাবিরোধী তৎপরতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষে যুক্ত আছে বিশে^র বিভিন্ন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানও। অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রানচেসকা আলবানিজ সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এমন অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা ফিলিস্তিনি জনগণকে বাস্তুচ্যুত করা ও গাজায় চলমান গণহত্যায় ইসরায়েলকে সহায়তা করছে। তাদের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। প্রতিবেদনটিতে ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান) ও অ্যামাজন। এই তদন্তের অংশ হিসেবে এক হাজারের বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের এই চিরস্থায়ী দখলদারত্ব অস্ত্র প্রস্তুতকারক ও বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পরীক্ষা–নিরীক্ষার আদর্শ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সেখানে চাহিদা ও জোগানের সুযোগ রয়েছে। রয়েছে আন্তর্জাতিক নজরদারির ঘাটতি। নেই কোনো জবাবদিহি। বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছে।

 

তাছাড়া ইসরায়েল বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র ক্রয় কর্মসূচির অংশ হয়ে উঠেছে। যেমন ইসরায়েলের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহ। এই যুদ্ধবিমানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৮টি দেশের ১ হাজার ৬০০-এরও বেশি প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লকহিড মার্টিন। তবে এই যুদ্ধবিমানের বিভিন্ন সরঞ্জাম বিভিন্ন দেশে তৈরি হয়। ইতালির লিওনার্দো এসপিএ সামরিক খাতে অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত এবং জাপানের এফএএনইউসি করপোরেশন অস্ত্র তৈরির রোবোটিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। প্রযুক্তি খাতও ইসরায়েলের পক্ষে ভূমিকা রাখছে। ফিলিস্তিনিদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সরকারি ব্যবহারে সহায়তা করে ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন ইসরায়েলকে তাদের ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তিগুলোর ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ সরকারি ব্যবহারের সুযোগ’ দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরকারি ব্যবহারে সহায়তা করে ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট ও অ্যামাজন ইসরায়েলকে তাদের ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তিগুলোর ‘প্রায় পূর্ণাঙ্গ সরকারি ব্যবহারের সুযোগ’ দিয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আইবিএম ইসরায়েলি সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং ইসরায়েলের জনসংখ্যা, অভিবাসন ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষের (পিআইবিএ) কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ পরিচালনা করছে। এই ডেটাবেজে ফিলিস্তিনিদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান পালানটির টেকনোলজিস ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তিগত সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এই প্রতিষ্ঠান ‘স্বয়ংক্রিয় পূর্বাভাসমূলক পুলিশি প্রযুক্তি’ সরবরাহ করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে টার্গেট তালিকা তৈরি করে। যেমন ‘লেভেন্ডার’, ‘গোসপেল’ ও ‘হোয়ার ইজ ড্যাডি’ নামের এআই সিস্টেম। প্রতিবেদনে আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, যারা বেসামরিক প্রযুক্তি তৈরি করলেও সেগুলো ইসরায়েলের দখলদারত্বে ‘দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য’ যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- ক্যাটারপিলার, রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ (লিওনার্দোর মালিকানাধীন), দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই, সুইডেনের ভলভো গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠান বাড়িঘর ভাঙচুর ও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি নির্মাণে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। বুকিং ডট কম ও এয়ারবিএনবি প্ল্যাটফর্মগুলো অবৈধ বসতিতে ঘরবাড়ি ও হোটেলের তালিকা দিয়ে দখলদারত্বকে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রামন্ড কোম্পানি ও সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোরÍএ দুই প্রতিষ্ঠান কলম্বিয়া থেকে কয়লা সরবরাহ করে, যা ইসরায়েলের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কৃষিখাতে চীনের ব্রাইট ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইসরায়েলের বৃহত্তম খাদ্য সংস্থা নুভার মালিক। প্রতিষ্ঠানটি ফিলিস্তিনি জমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনায় লাভবান হয়। এয়ারবিএনবি ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে কিছু সময়ের জন্য অবৈধ বসতির তালিকা সরিয়ে নিলেও পরে আবার যুক্ত করে এবং সেই মুনাফা ‘মানবিক’ খাতে দান করার কৌশল নেয়। প্রতিবেদনে তাদের এই কৌশলকে ‘হিউম্যানিটারিয়ান-ওয়াশিং’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। মেক্সিকোর ৮০ শতাংশ মালিকানার নেটাফিম ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান অর্বিয়া অ্যাডভান্স করপোরেশনের কাছে পশ্চিম তীরে পানি উত্তোলন ও ব্যবহারযোগ্য করার প্রযুক্তি সরবরাহ করে। ট্রেজারি বন্ডও (রাষ্ট্রীয় ঋণপত্র) গাজার যুদ্ধে অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক, যেমন ফ্রান্সের বিএনপি পারিবাস ও যুক্তরাজ্যের বার্কলেস ইসরায়েলকে ঋণসুবিধা দিয়েছে, যা যুদ্ধ চলাকালে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করেছে। (চলবে)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট