
প্রথমত একজন গার্মেন্টস প্রস্তুতকারক হিসেবে, দ্বিতীয়ত বিজিএমইএ’র একজন বোর্ড সদস্য হিসেবে, এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে গত এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত প্রাথমিক শুল্ক এবং ভবিষ্যতে আরও উচ্চতর শুল্কের সম্ভাবনা আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। ঐদিন থেকেই বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনা এক নতুন মোড় নেয়-পশ্চিম থেকে পূর্ব, সবাই নিজেদের জন্য সেরা চুক্তি আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বাংলাদেশ সরকার শুরুতে কিছুটা দ্বিধায় ছিল, কারণ আলোচনাটি ছিল কঠিন কিছু নন-ডিসক্লোজার চুক্তির সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। তবে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং পরবর্তীতে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সংশ্লিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি সর্বোত্তম সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি।
তবে আসল কাজটি এখন শুরু। এই শুল্কহার, যা তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে কম এবং ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার সমান, তা সত্ত্বেও শিল্পখাতে অতিরিক্ত খরচের প্রভাব পড়বে। আমাদের এখন ক্রেতাদের সঙ্গে নতুনভাবে দরকষাকষি করতে হবে এবং খরচ, সুযোগ ও সম্প্রসারণের একটি দীর্ঘমেয়াদী রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে- বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজারে প্রবেশের উদ্দেশ্যে। যদিও চীন এই মুহূর্তে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে, তাকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ- বিগত তিন মাসের তথ্য বলছে—সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত হওয়া সত্ত্বেও চীনের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় নি। বরং চীন আবারও নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কৌশল খুঁজে পেয়েছে।
আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই সেই সকল ব্যক্তিদের প্রতি, যারা এই জটিল আলোচনার অংশ ছিলেন এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছেন। এখন সময় এসেছে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের। আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার, নীতিনির্ধারক, নাগরিক সমাজ, শ্রমিক ফেডারেশন এবং সকল বাণিজ্য সংগঠনকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণের। কারণ, যদি আমরা সঠিকভাবে ও সম্মিলিতভাবে নিজেদের অবস্থান নির্ধারণ করতে পারি, তাহলে এই অর্থনৈতিক পরিবর্তন আমাদের দেশের জন্য এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্টসহ আমরা যারা বোর্ডে আছি, আমরা সকলে মিলে তথ্য উপাত্তগুলো পর্যালোচনা করে, সম্ভাবনাগুলো আরো সঠিকভাবে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আশা করছি।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ
পূর্বকোণ/এএইচ