চট্টগ্রাম সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে ফের হাতির উপস্থিতি, আতঙ্ক
ছবি: পূর্বকোণ

আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে ফের হাতির উপস্থিতি, আতঙ্ক

সুমন শাহ, আনোয়ারা

৩১ জুলাই, ২০২৫ | ১২:৪৯ অপরাহ্ণ

আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড় এলাকায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে হাতির পালের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় থেকে নেমে এসে ফসল নষ্ট, বাড়িঘরে আক্রমণ ও জনজীবনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে হাতিগুলো। গত ১৩ এপ্রিল ভোরে চারটি হাতি বাঁশখালী বনে ফিরে যাওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল এলাকায়। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরই আবারও হাতির উপস্থিতি দেখা গেছে।

 

গত রবিবার সন্ধ্যার পর বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক এলাকার লোকালয়ে একটি হাতিকে ঘুরতে দেখা যায়, যা স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানান, হাতির আকস্মিক আগমন তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিরাট বাধা সৃষ্টি করছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও বন বিভাগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করছেন সবাই।

 

স্থানীয় মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, হাজিগাঁও এলাকায় পাহাড়ে লেজকাটা হাতিটি দেখতে পান স্থানীয়রা। আবারও আমাদের ঘুম হারাম করে দিলো বন্যহাতি। তিনি বলেন, অনেক মানুষ আগের করা ভিডিও ছেড়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। কেউ কেউ ভিডিওতে চারটি হাতি আসছে বলেও দাবি করছেন। তবে মানুষকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে এবং গুজবে কান দেয়া যাবে না।

 

হাতি নিরাপদে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরিয়ে নিতে আন্দোলনকারী নেতা নুরুল আজিম বলেন, সাত বছরের বেশি সময় ধরে চুনতি অভয়ারণ্য থেকে এসে হাতির দল দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে রাতের আঁধারে আনোয়ারা-কর্ণফুলীর বিভিন্ন গ্রামে খাবারের সন্ধ্যানে নেমে তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ২৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ নারী-শিশু ও বৃদ্ধা। হাতি আক্রমণ চালিয়ে স্থানীয়দের বসতবাড়ি, দোকানপাটসহ হাজার হাজার টাকার সম্পদ নষ্ট করে।

 

তিনি আরও বলেন, হাতিগুলো সরিয়ে নিতে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনে বারবার আবেদন করেও কার্যকরী কোন উদ্যোগ না দেখে স্থানীয়রা বাধ্য হয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে হাতিগুলো ফিরিয়ে নিতে আন্দোলনে নামে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে পথসভা, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও হাতি সরিয়ে নিতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে বন বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

 

কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, হাতিগুলো আবারও ফিরে আসা মানে আমাদের জন্য দুঃসংবাদ। হাতির কারণে কেইপিজেড অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ৩৫ হাজার শ্রমিকের যাতায়াত ব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে।

 

বাঁশখালী জলদী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, সাড়ে তিন মাস আনোয়ারা থেকে হাতিগুলো সরে গিয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২০ জুলাই তিন-চারটা হাতি আবারও আনোয়ারায় ফিরে আসে। বর্তমানে হাতিগুলোর জন্য গঠিত ৫০ সদস্যের ইআরটি টিম রাতে পাহারা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, আনোয়ারায় হাতি আসার খবরটি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছি। বন বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং স্থানীয়দের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

 

পূর্বকোণ/ইবনুর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট