
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অফিসে এক যুবককে মারধরের ভিডিও ভাইরালের পর তদন্তে নেমেছে পুলিশ। নগরীর ট্রাঙ্ক রোডের পিবিআই ভবনে ওই যুবককে মারধরের ভিডিও গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তবে ভিডিওতে মারধরের ঘটনাটির সময়কাল উল্লেখ নেই। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয় পিবিআই সদর দপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- প্রায় সাত মাস আগে ছিনতাই হওয়া একটি মুঠোফোন উদ্ধার করতে গিয়ে দুই যুবককে আটক করেন পিবিআইয়ের (জেলা) উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন। আটকের পর তাদেরকে নগরীর ট্রাঙ্ক রোডের পিবিআই ভবনে নিয়ে আসা হয়। আটক দুই যুবকের একজনকে শাহদাতের অফিস কক্ষে তার কথিত সোর্স লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এরপর দুই যুবককে ছেড়েও দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান- ভাটিয়ারী এলাকা থেকে এক ব্যক্তির মুঠোফোন ছিনতাই হয়। ওই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই ডায়েরির সূত্র ধরে মুঠোফোনটি উদ্ধারে নামেন এসআই শাহাদাত। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিনি মুঠোফোনটির সন্ধান পান ফেনীতে। পাঁচ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ফেনী গিয়ে মুঠোফোনসহ এক যুবককে আটক করেন তিনি।
তবে আটক ওই যুবক এসআই শাহাদাতকে জানান, তিনি ছিনতাইয়ে জড়িত নন। মুঠোফোনটি সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার একজনের কাছ থেকে কিনেছেন। পরে পাঁচ হাজার টাকায় আরেকটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ভাটিয়ারী গিয়ে আরেক যুবককে আটক করেন শাহাদাত। দুই যুবককেই তিনি পিবিআই অফিসে নিয়ে আসেন। সেখানেই শাহাদাতের কক্ষে এক যুবককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এসআই শাহাদাত ফেনী ও ভাটিয়ারীতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য যে দুটি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন সে দুই মাইক্রোবাসের চালক ছিলেন ফোরকান ও জাহাঙ্গীর আলম। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়- চালক ফোরকানই আটক যুবককে মুখে ঘুষি মারছেন।
জানতে চাইলে মাইক্রোবাস চালক ফোরকান জানান, ঘটনাটি প্রায় সাত মাস আগের। ভাটিয়ারী যাওয়ার কথা বলে এসআই শাহাদাত অমার মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। ভাটিয়ারী থেকে এক যুবককে আটক করেন তিনি। আটক করা যুবককে সন্ধ্যায় পিবিআই অফিসে এনে এসআই শাহাদাতের অফিস কক্ষে রাখা হয়। সেখানে শাহাদাত ছাড়াও বেশ কয়েকজন লোক ছিলেন।
তিনি বলেন, ভাটিয়ারী এলাকায় রাতের বেলায় গাড়িতে রড ছুড়ে মেরে ডাকাতি করা হয়। ওই রাগে আমি আটক করা যুবককে মুখে ঘুষি মারি। এ সময় আরেকজন ব্যক্তি ওই যুবককে লাঠি দিয়ে পেটায়। কিন্তু তাকে আমি চিনি না।
আরেক গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এসআই শাহাদাত ফেনী যেতে আমার গাড়ি পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করেন। ফেনী থেকে এক যুবককে আটক করা হয়। ওই যুবককে রাতে পিবিআই অফিসে পৌঁছে দিয়ে ভাড়া নিয়ে আমি চলে যাই। মারধরের বিষয়ে কিছু জানি না।
অভিযুক্ত এসআই শাহাদাত হোসেন বর্তমানে বাহ্মণবাড়িয়া পিবিআইতে কর্মরত আছেন। গতকাল বুধবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে।
তবে এসআই শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান- পিবিআইয়ের মতো একটি বিশেষায়িত সংস্থার একজন এসআই একটি মোবাইল উদ্ধারে কেনো ১০ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিলেন- এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। শুধু ওই মোবাইল উদ্ধারে নয়, শাহাদাত প্রায় মোবাইল উদ্ধারে যেতেন। মোবাইল উদ্ধার করে দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (মেট্রো-জেলা) রুহুল কবির খান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আমরা দেখেছি। আমি যোগদান করেছি মাত্র দুই মাস আগে। পিবিআই সদর দপ্তর থেকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। শাহাদাতকেও ডাকা হয়েছে।
পূর্বকোণ/ইবনুর