
সীতাকুণ্ডে পতিত পুকুরে ভেটকি আর তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি এলাকার বহু মানুষের চোখ খুলে দিয়েছেন জেবল হোসেন নামক এক মৎস্য চাষী। যা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের মধ্যেরধারী গ্রামের জেবল হোসেন একজন কর্ম উদ্যমী মানুষ। সংসারের প্রয়োজনে নানান কাজ করে আয় করতেন তিনি। এলাকার বেড়িবাঁধ এলাকায় ছিল তার একটি পতিত পুকুর। লবণাক্ততার কারণে এই পুকুরে সব ধরনের মাছ চাষ সম্ভব ছিল না। ফলে এটি অবহেলায় পড়েছিল।
এই কথা জানতে পেরে জেবল হোসেনকে ঐ পুকুরে ভেটকি ও তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষের পরামর্শ দেন স্থানীয় এনজিও ইপসার কৃষি ইউনিটের মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তার পরামর্শ ভালো লাগায় জেবল হোসেনও আগ্রহী হলে ঐ কর্মকর্তা জেবল হোসেনকে এনজিওটির মাধ্যমে মাছের পোনা, মাছ ধরার জাল, চুন, সবজি বীজ, পেঁচে, লেবু চারা, রাসায়নিক সার, ভার্মি কম্পোস্ট ইত্যাদি সহযোগিতা প্রদান করেন। এছাড়া পুকুর পরিচর্যায় চুন ও সার প্রয়োগ, পোনা মজুদ ও মজুদ পরবর্তী ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি নিজে নিয়মিত জেবল হোসেনের পুকুর পরির্দশন ও দিক নির্দেশনা প্রদান অব্যাহত রাখেন।
জেবল হোসেন জানান, তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার এনজিও ইপসার একটি প্রকল্পের সদস্য। তার কাছেই জানতে পারেন ইপসা পুকুরে জলবায়ু সহনশীল ভেটকি ও তেলাপিয়া মাছের মিশ্র চাষ প্রযুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করছে। এতে তিনিও তার পতিত পুকুরে এই মিশ্র মাছ চাষে আগ্রহের কথা জানালে এগিয়ে আসেন ইপসার কৃষি ইউনিটের মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। তিনি জেবল হোসেনকে পুকুর পরিচর্যা থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র সহযোগিতায় তাকে দেয়া হয় মাছের পোনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার জাল, চুন, সবজি বীজ, পেঁচে, লেবু চারা, রাসায়নিক সার, ভার্মি কম্পোস্ট সার থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। যা পেয়ে তার চাষ অনেক সহজ হয়ে যায়।
তিনি জানান, তিনি ছোট (১০০ গ্রাম এর কম) আকারের প্রায় ৫০০ পিস ভেটকি মাছের পোনা দিয়ে শুরু করেন ভেটকি- তেলাপিয়া মিশ্র চাষ। পুকুরে তেলাপিয়া মাছ থাকায় খাবার খরচ খুবই কম লাগে কারণ তেলাপিয়া ঘন ঘন বাচ্চা দেয় যা ভেটকি মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভেটকি মাছ উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয় বলে লাভের পরিমাণটাও বেশি। সব মিলিয়ে এখানে চাষাবাদে বার্ষিক তার খরচ ৩০ হাজার টাকা। আর এই পুকুর থেকে তিনি মাছ বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকারও বেশি। ফলে খরচ বাদ দিয়েও তার ৯০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। পতিত পুকুর থেকে তার এ আয় দেখে এখন লবণাক্ত জমিকে পুকুরে রূপান্তর করে মাছ চাষ শুরু করছেন আরো অনেকে। এটি তার কাছে ভালো লাগার বিষয়।
মৎস্য আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, আমরা পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় উপকূলীয় এলাকায় এ ধরনের মৎস্য চাষকে উৎসাহিত করতে কাজ করছি। জেবল হোসেনের এরকম একটি এক একর আয়তনের পতিত পুকুর আছে জেনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তার আগ্রহ দেখে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছি আমরা। এখন সে বছরে ৯০ হাজারের বেশি টাকা আয় করে খুশি। ভবিষ্যতে তাকে আরো বড় প্রজেক্ট করতে সহযোগিতা করতে চাই আমরা।
পূর্বকোণ/ইবনুর